চাঁদার দাবিতে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন, যবিপ্রবিতে বহিষ্কার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম
বাঁ থেকে- ইসমাইল হোসেন, সোয়েব ও সালমান
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ইসমাইল হোসেন নামে এক ছাত্রকে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইসমাইল ময়মনসিংহ জেলার বলারামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত যবিপ্রবির কম্পিউটার ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের সদ্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সোয়েব আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। একই সাথে তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা দায়ের ও ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযুক্ত দুইজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টকে থানায় মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে প্রভোস্ট বডি আগামি সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। এছাড়াও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন এই দুই শিক্ষার্থী। দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এরা তাকে ডেকে হলে নিয়ে যায়। এরপর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানসিক নির্যাতন করে। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি বলেন, ইসমাইল কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। রোববার দুপুরের পর থেকে ইসমাইলকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এমনকি তার ফোনও বন্ধ ছিলো। সে রোজা ছিলো, ইফতারের সময় ইসমাইলকে না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। ওর সহপাঠীরা জানায়, হলের সালমান আর সোয়েব ক্লাস চলাকালীন সময়ে ডেকে নিয়ে গেছিলো, তারপর আর খোঁজ নেই ইসমাইলের। পরে আমরা সবাই গিয়ে দেখি ইসমাইল ৫২৮ নম্বর কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রথমে ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়াতে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষটি ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী সোয়েব ও সালমান দুজনই থাকতেন। এমনকি গাঁজা সেবন ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে সোয়েব বহিষ্কার হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলের নিয়মিত বাসিন্দা তিনি। তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগে সভাপতি-সম্পাদকের আলাদা কোন গ্রুপ নেই। ফলে আমার অনুসারী হওয়ার সুযোগও নাই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ছাত্রলীগের কোন পদে নেই। তারা কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের মিটিং মিছিলে অংশ নিতে পারে। একজন কর্মী অপরাধ করলে তার দায় তো সংগঠন বহন করবে না।
সোমবার (৩ এপ্রিল) এক নোটিশে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো.আশরাফুজ্জামান জাহিদ জানান, অভিযুক্ত সোয়েব আলী ও সালমান এম রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো.আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভর্তি করার আগে তার মুখ দিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য- চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা নির্যাতনের কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছি।
রিটন/টিপু