ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

গাসিক নির্বাচন: কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১১ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৯:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০২৩
গাসিক নির্বাচন: কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ২৫ মে। এবার এই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। নির্বাচনের তাফসিল ঘোষণার পর থেকেই তাই মাঠ ঠিক করতে শেষ পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। ভোটের মাঠে নেই বিএনপি ও তাদের শরীক দল। ফলে সবকিছু ছাপিয়ে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগই রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। 

ইতোমধ্যে গাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে এবং দলীয় মনোনয়নপত্র পেতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তোড়জোড় শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন গাসিক’র বর্তমান মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ও গাজীপুর সিটির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও কামরুল আহসান সরকার রাসেল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর চাচা মতিউর রহমান মতি, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মদ প্রমুখ। 

আরো পড়ুন:

তবে সবকিছু ছাপিয়ে জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা ও শক্তিমত্তায় এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর, আজমত উল্লাহ, কামরুল আহসান রাসেল ও মামুন মন্ডল। এদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা কর্মী সমর্থক ও ভাবমূর্তি। 

আসাদুর রহমান কিরণ তৃণমূল থেকে বেড়ে উঠেছেন। প্যানেল মেয়র থেকে দুই মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। 

আবদুল্লাহ আল মামুন মন্ডলের রয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মীবাহিনী ও জনপ্রিয়তা। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবারের কাউন্সিলর। অপরদিকে গাজীপুর মহানগরীর ক্লিন ইমেজের নেতা কামরুল আহসান সরকার রাসেল। দল ও দলের বাহিরে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। 

এদিকে বিতর্কিত মন্তব্যের অডিও ভাইরাল হলে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি তিনি দলীয় সদস্য পদ ফিরে পেয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ ও দলীয়  মনোনয়ন পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে জাহাঙ্গীর উল্লেখযোগ্য কর্মী সমর্থক রয়েছে। দল ও দলের বাহিরেও বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তিনি একজন বর্ষীয়ান নেতা। টঙ্গী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা জুড়ে তিনি সমান তালে জনপ্রিয় নন। তারও রয়েছে আলাদা কর্মী বাহিনী। মনোনয়নের দৌঁড়ে তিনিও রয়েছেন এগিয়ে। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। আমার স্থানীয় সরকার বিভাগে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গাজীপুর নগরীর মানুষ আমাকে চায়, দলীয় লোকরাও আমাকে চায়। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচরণা চলছে। আমি দল থেকে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইব। আমি নমিনেশন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। 

নিবার্চনে অংশ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরবাসী আমাকে ভালোবাসে। সব পেশার মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে। আমি নির্বাচনে আমার দলের কাছে নমিনেশন চাইবো। আমি নগরীর মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা বিনির্মাণে অতীতের মত কাজ করে যাবো। এই সিটি করপোরেশনকে স্মার্ট সিটি তৈরীতে কাজ করে যাব।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, আমি শূন্য হাতে এই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। গত প্রায় এক বছর সিটি করপোরেশনের সব ব্যয় নির্বাহের পরেও বর্তমানে শতকোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। সিটি করপোরেশন এখন স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে সব কাউন্সিলর ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছে। এই সিটি করপোরেশনএ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইবো। 

কামরুল আহসান সরকার রাসেল বলেন, আগামী ২৫ মে নির্বাচন। আমি দলের কাছে নমিনেশন চেয়েছি। আশা করছি দল এবং নেত্রী আমাকে নমিনেশন দেবেন। বিগত দিনে প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে যেভাবে দলের পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতির ক্রান্তিলগ্নে বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় নগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে দলের হয়ে, প্রধানমন্ত্রীর হয়ে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি শতভাগ আশা রাখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেবেন।

আবদুল্লাহ্ আল মামুন মন্ডল বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।মানুষ আমাকে ভালোবেসে পর পর দুইবার বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেন। মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গত ৫ বছর ধরে আমি নগরীর মানুষের কাছে ঘুরছি। তাদের সুখ দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি দল ও দলীয় প্রধান আমাকে নমিনেশন দেবেন।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী মন্ডল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি । দল যাকে মনোনয়ন দেবেন মহানগর আওয়ামী লীগ তার হয়েই কাজ করবে। আমরা সবাই তার হয়ে কাজ করবো। 

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার রয়েছেন ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৩ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৮ জন।

দেশের সর্ববৃহৎ এই সিটি নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল ২৭ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল। এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৮ মে, প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়