তাপপ্রবাহে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, বাড়ছে গরমজনিত রোগ
এম এম আরিফুল ইসলাম, নাটোর || রাইজিংবিডি.কম
নাটোরের হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ
নাটোরের লালপুরে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষরা সাবমারসিবল পাম্পে গিয়ে ভিড় করেছেন পানির জন্য।
এদিকে, তীব্র গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও প্রবীণরা। এছাড়া অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় প্রায় ৫৪ হাজার হস্ত চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের মাধ্যমে ২৫ থেকে ২৭ ফুট মাটির গভীরের পানি উঠানো হয়। কিন্তু লালপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে ৩২ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না।
উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল দুড়দুড়িয়া, বিলমাড়িয়া, ঈশ্বরদী, লালপুর ইউনিয়ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এছাড়া চংধুপইল, আড়বাব ও ওয়ালিয়া এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
দিয়াড় শংকরপুর চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, বাড়ির চাপকলে এক গ্লাস পানিও উঠানো যাচ্ছে না। তাই পাশের গভীর নলকূপ থেকে পানির চাহিদা মেটাচ্ছি।
মোহরকয়া চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছি না। পানির অভাবে চাষবাদ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পাইপে ঠিকমতো পানি উঠছে না। এর ওপর বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছি। মাঝ রাতে মাঠে গিয়ে অনেক চেষ্টা করে এক বিঘা জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে পারিনি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিন আহমেদ বলেন, পদ্মা নদী তীরবর্তী সবচেয়ে উচুঁ ও কম বৃষ্টিপাতের এলাকা লালপুর। চলমান দাবদাহ, অনাবৃষ্টি ও পরিবেশগত নানা কারণে পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপন করা সাবমার্সিবল পাম্প ও অগভীর নলকূপে পানির সমস্য নেই। যে কোনো সমস্যায় মেরামত ও পানি সঙ্কট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সচেষ্ট রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেই ভূগর্ভের পানির স্তর উঠে আসবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলমান দাবদাহে উপজেলায় কৃষির ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কৃষকরা সেচের মাধ্যমে সবজি ও ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। উৎপাদন ব্যবহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
দেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতম স্থান লালপুরে লোডশেডিংয়ে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পবিত্র রমজান আর গরমের উত্তাপ এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারি, তারাবি ও সেহেরির সময়ও ছাড়াও দিন রাত মিলিয়ে অর্ধেক বা তার বেশি সময় লোডশেডিং থাকছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ লালপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রেজাউল করিম খান বলেন, হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুতের লোড বেড়ে গেছে। গরমের কারণে বাসা বাড়ি, মার্কেট, অফিসে এসির ব্যবহার বেড়েছে। চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ আসছে। তবে সেহেরি ও ইফতারের সময় যেন লোডশেডিং না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে (১৩-১৬ এপ্রিল) হাসপাতালে ৬০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ জন। আর অন্যান্য রোগী ৬১ জন। হিট স্ট্রোকের কোনো রোগী ভর্তি হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম শাহাব উদ্দিন তীব্র গরমে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা, ছাতা ব্যবহার, বেশি করে পানি পান, সুতির কাপড়ের ব্যবহার ও খোলামেলা জুতা পরা এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন।
শাহব উদ্দিন বলেন, প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া মাংস পেশিতে ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা পাওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে রক্তচাপ পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসুদ