ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৫ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে মহাস্থানগড়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৩  
ঈদের ছুটিতে মহাস্থানগড়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা

বগুড়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মহাস্থানগড়। এক সময়ের প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী এই পুণ্ড্রনগরীটির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরনো। এলাকাটি প্রাচীণ পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে ঠাসা। যে কারণে মহাস্থানগড়কে ঘিরে স্থানীয়, দেশি ও বিদেশী পর্যটকদের কৌতুহলটা অন্যরকম। 

ঈদ এলেই মহাস্থানগড় দর্শনার্থীদের ভিড়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে যায়। চলতি ঈদেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ঈদের প্রথম দিন থেকেই পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বগুড়াসহ আশপাশের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা মহাস্থানে ভিড় করছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জোরদার ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহাস্থানগড় তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মৌর্য, সুঙ্গ, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি বৌদ্ধ ও হিন্দু রাজবংশের রাজত্বের রাজধানী ও শাসনকেন্দ্র ছিল। আর এ কারণেই পুরো মহাস্থানগড় একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। আড়াই হাজার বছরের সভ্যতা নিয়ে মাটির নিচে চাপা পড়া এই নগরীটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও এক কিলোমিটার প্রশস্ত । তবে এই এলাকাটি সমতলভূমির তুলনায় অনেক উচু। মাটির নিচে চাপা পড়ার কারণেই এই অবস্থা। তবে নগরীটি মাটির নিচে চাপা পড়লেও এর দুর্গপ্রাচীর আর প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষ এখনো দৃশ্যমান। পাঁচ হাজার ফুট দীর্ঘ প্রাচীরবেষ্টিত ও চার হাজার ৫০০ ফুট প্রশস্ত নগরীর পুরোটাই প্রত্মতাত্ত্বিক নির্দশনে সমৃদ্ধ। প্রতিনিয়ত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন নিদর্শন বেরিয়ে আসছে নগরীটিতে। 

আরো পড়ুন:

বিভিন্ন সময় প্রত্নতত্ত্ব খননে বিভিন্ন আমলের নির্মাণ স্তরের স্থাপত্য কাঠামোর পাশাপাশি বেশ কিছু প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়। এই প্রত্নসামগ্রীগুলো মহাস্থান জাদুঘরে রাখা আছে। জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মৃৎপাত্রের টুকরো, সুঙ্গ আমলের পোড়ামাটির কারুকার্যখচিত ফলক, সাঁচে ঢালাইকৃত মুদ্রা, গুপ্ত আমলের পোড়ামাটির মাথা, ভাসুবিহার থেকে প্রাপ্ত পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকের পোড়ামাটির ফলক, অষ্টম ও নবম খ্রিস্টাব্দের মূল্যবান পাথরের বটিকা, বেলে পাথরের বুদ্ধমূর্তি, বেলে পাথরের নকশাকৃত পিলার, পোড়ামাটির পাত্র, নবম ও দশম খ্রিস্টাব্দের বিষ্ণুমূর্তি, অবলিকেতেশ্বর মূর্তি, দত্তাত্রেয় মূর্তি, দশম ও একাদশ খ্রিস্টাব্দের বিষ্ণুমূর্তি, চামর ধারিণী, উমামহেশ্বর, সূর্যমূর্তি, লক্ষ্মী-কার্তিকসহ বিভিন্ন মূর্তি, দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ খ্রিস্টাব্দের সংস্কৃত ভাষার শিলালিপি, পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দের (মুসলিম আমল) শিলালিপি, অলংকৃত ইট, চকচকে পাত্র ইত্যাদি। মহাস্থানগড়ের এই জায়গার মধ্যে রয়েছে মহাস্থান মাজার, পরশুরাম প্যালেস, জিয়ৎ কুণ্ড, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর কুণ্ডু, মুনির ঘোন ও শিলা দেবীর ঘাট। 

নগরীর বাইরের প্রায় পাঁচ বর্গমাইল এলাকার মধ্যে রয়েছে বেহুলার বাসরঘর। এটি গোকুল মেধ নামেও পরিচিত। এছাড়া ভীমের জাঙ্গাল, ভাসুবিহার, বিহার ধাপসহ নানা প্রত্নস্থল ও নিদর্শন রয়েছে সেখানে।

মহাস্থানে ঘুরতে আসা লিজা আক্তার বলেন, আমরা বগুড়া শহরে থাকি। আসলে শহরে তো প্রতিদিন কাজের প্রয়োজনে কোথাও না কোথাও যাওয়া হয়। আর শহরে দেখার মতো তেমন কিছু পাই না। যে কারণে আজকে বান্ধবীদের নিয়ে মহাস্থানগড় ঘুরতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। আমরা ছবি তুলেছি। এগুলো ফেসবুকে পোস্ট করবো।

অপর দর্শনার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে জয়পুরহাট থেকে মহাস্থানগড় ঘুরতে এসেছেন। তিনি এর আগেও এসেছেন। কিন্তু পরিবার নিয়ে এবারই প্রথম। 

তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণ পরিবারকে সময় দেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। ঈদে ছুটিতে তাই পরিবারকে সময় দিচ্ছি। মহাস্থানগড়ে এসে খুব ভালো লেগেছে।

সাফিয়া জান্নাত নামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, আমি ভাইয়াদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। এর আগে গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি। জাদুঘরে ঢুকেছিলাম। পুরনো অনেক জিনিসপত্র দেখলাম। এছাড়া গোবিন্দ ভিটায় গিয়েছিলাম। সেখানে অনেকগুলো ছবি উঠিয়েছি।  

মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, ঈদের দিন থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা থানাকে জানিয়েছি। সেখান থেকে তারা হেল্প করছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাদের হেল্প করছে। এছাড়া আমাদের ২০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য আছেন। সবমিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা আছে।

যেভাবে যাওয়া যাবে মহাস্থানগড়ে: মহাস্থানগড় বগুড়া শহর থেকে ১২  কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মহাস্থানগড়ে যেতে হলে শহরের সাতমাথা থেকে পায়ে চালিত রিকশা অথবা অটোরিকশায় যেতে হবে দত্তবাড়ীতে। সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৭ মিনিট।  এরপর দত্তবাড়ী থেকে থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে ২০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি পৌছে যেতে পারবেন মহাস্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজারের দরজা পর্যন্ত। কেউ যদি সিএনজি অটোরিকশাকে ঝুকি মনে করেন তাহলে বাসে মহাস্থানগড়ে যেতে হলে তাকে দত্তবাড়ী থেকে মাটিডালি যেতে হবে। মাটিডালি থেকে পর্যাপ্ত বাস পাওয়া যাবে মহাস্থানগড়ে যাওয়ার জন্য।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়