পানির সঙ্কট আর লবণাক্ততায় অতিষ্ঠ চট্টগ্রামবাসী, বৃষ্টির আশায় ওয়াসা
রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম
পানির উৎপাদন হৃাস, সরবরাহ ঘাটতি এবং পানিতে লবণাক্ততার কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষরা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা রেশনিং করে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ দিচ্ছে। এদিকে, কোনো কোনো এলাকায় পানির স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় স্থানীয়রা ওয়াসা থেকে নগদে পানির ভাউচার কিনে পানির চাহিদা পূরণ করছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা জানিয়েছে, অনাবৃষ্টির কারণে ওয়াসার পানি শোধনাগার সমূহের মূল পানির উৎস থেকে প্রয়োজনীয় পানি শোধন ও সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নগরজুড়ে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা করছে তারা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়াস্থ ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের নিকটবর্তী এলাকায় বসবাস করেন হামিদুর রহমান লিটন নামের এক চাকরিজীবী। কথা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা গত এক মাস ধরে দিনের পর দিন পানির তীব্র সঙ্কটের মধ্যে দিন পাড় করছি। কখনো কখনো টানা এক দুই দিনও পানি থাকছে না। ফলে রান্না, গোসল ও বাথরুমে পানি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আত্মীয় স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে গোসল করিয়ে আনতে হচ্ছে।’
নগরীর চকবাজার ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা আবিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দুই দিন পর একদিন পানি সরবরাহ পাচ্ছি। এই পুরো এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট যাচ্ছে। যতটুকু পানি পাচ্ছি তাও লবণাক্ত। পানি ফুটিয়ে ও ফিল্টার করেও লবণাক্ততা যাচ্ছে না।’
একই এলাকার গৃহীনি সামিনা হায়দার বলেন, ‘লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।’
চট্টগ্রামের সমাজকর্মী কায়সার আলী চৌধুরী বলেন, ‘পানির সঙ্কট আর লবণাক্ততায় আমরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। একদিকে দিনের অধিকাংশ সময় পানি থাকছে না। আবার কখনো পানি সরবরাহ পাওয়া গেলেও লবণাক্ততার কারণে সেই পানি ব্যবহার করাও যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় পানি আসছে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত।’ এদিকে, পানি সঙ্কট নিরসনে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ ও মানবন্ধন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরমের পক্ষ থেকে সঙ্কট নিরসনে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
পানির সঙ্কট ও লবণাক্ততার কথা স্বীকার করেন চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে ওয়াসার প্রায় সবগুলো পানি শোধনাগারে পানির উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হৃাস পেয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন ৪৬ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে গড় উৎপাদন ৪০ কোটি লিটারে নেমে এসেছে। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৫/৬ কোটি লিটার উৎপাদন ঘাটতির কারণে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করে পানি সরবরাহ দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের মূল পানির উৎস হালদা নদী। সেই নদীর পানিতেও লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। ফলে শোধন করার পরও পানিতে লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে। ফলে অনেক এলাকার গ্রাহক লবণাক্ত পানির সরবরাহ পাচ্ছেন।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই সঙ্কট কেটে যাবে। একদিকে অনাবৃষ্টি এবং ওয়াসার পানির উৎস কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীতে মাত্রাতিরিক্ত শ্যাওলা যুক্ত পানি প্রবাহের ফলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াস্থ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার–১ ও ২ এর পানির উৎপাদন কমে গেছে।’
মাসুদ