ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২ ১৪৩১

৭ বছর বয়সী নয়নের হাতে সংসারের হাল

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১ মে ২০২৩   আপডেট: ১৯:৫৯, ১ মে ২০২৩
৭ বছর বয়সী নয়নের হাতে সংসারের হাল

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের সোনালী মোড় গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (৭)। এই বয়সের শিশুরা পড়াশোনা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হইহুল্লোড়ে দিন পার করলেও নয়ন মিয়ার ক্ষেত্রে পুরোটাই ভিন্ন। সাত বছর বয়সে সংসারের হাল নয়নের হাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকে নয়ন। তিন ভাইয়ের মধ্যে নয়ন মিয়া মেঝ। বড় ভাই খোরশেদ মিয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ছোট ভাই শেখ ফরিদের বয়স দুই বছর।

সোমবার (১ মে) সরেজমিনে শহরের পৌর উদ্যানে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে গিয়ে নয়ন মিয়াকে পেয়ারা ও শসা ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যায়।

কথা হয় নয়নের মা খুশি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৬ বছর আগে রতন মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। রতন মিয়া বিভিন্ন মৌসুমি ফল ফেরি করে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ১০ বছর আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে খুশি বেগম অন্যের বাসা ও মেসে আয়ার কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু দুই বছর আগে ছোট ছেলে শেখ ফরিদ জন্ম নেওয়ার পর আর কাজ করতে পারেন না।

তিনি জানান, এরপর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় খোরশেদ ও নয়নের পড়াশোনা চলছিল। কিন্তু সংসারে অভাব ও নয়নের পড়াশোনার দিকে খেয়াল রাখতে না পারায় এক সময় লেখাপড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে সে। পরবর্তীতে নয়নই সংসারের হাল ধরে। গত চার মাস ধরে আম, আমড়া, আনারস, পেয়ারা ও শসা ফেরি করে বিক্রি করে। এতে প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো আয় হয়।

খুশি বেগম জানান, স্বামী রতন মিয়ার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার টাকার উপরে কিস্তি দিতে হয়। এছাড়া সংসারের খাবারসহ যাবতীয় খরচ বাবদ আরও প্রয়োজন হয় ৮ হাজার টাকা। ঘর ভাড়া ২২০০ টাকা। এ সবই নয়নের আয়ের টাকা দিতে মেটাতে হয়।

তিনি বলেন, ‘কোনও হৃদয়বান ব্যক্তি যদি নয়নের পড়ালেখার দায়িত্ব নিত, সেই সঙ্গে আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিত। তাহলে পরিবারের হাল ধরতে পারতাম। নয়নকেও মানুষের মতো মানুষ করতে পারতাম।’

শিশু নয়ন বলে, ‘বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আম, আমড়া, পেয়ারা, আনারস ও শসা বিক্রি করি। মা এসব কেটে প্যাকেট করে দেয় আমি বিক্রি করি। এই টাকা দিয়েই বাড়ির বাজার ও কিস্তি দেই। অন্য শিশুদের মতো আমিও পড়াশোনা করতে চাই।’

শহরের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র মৃদুল মিয়া বলেন, ‘এই বয়সে একটি শিশুর পড়াশোনায় ও পরিবারের সদস্যদের আদরে বেড়ে উঠার কথা। সামর্থবানদের নয়নের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

স্বেচ্ছাসেবীমূলক সংগঠন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, ‘নয়ন যদি পড়াশোনা করতে চায় তাহলে ওর দায়িত্ব নেওয়া হবে। এছাড়া, নয়নের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’

কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়