ঢাকা     সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১

জেম হত্যা মামলার মেরিট নষ্ট করেছে ‘অতিরিক্ত আসামি’

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১১, ৮ মে ২০২৩   আপডেট: ১২:১৪, ৮ মে ২০২৩
জেম হত্যা মামলার মেরিট নষ্ট করেছে ‘অতিরিক্ত আসামি’

নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খায়রুল আলম জেম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলোচিত খায়রুল আলম জেম হত্যা মামলার মেরিট নষ্ট করা হয়েছে ‘অতিরিক্ত আসামি’ যুক্ত করে-এমনই মনে করেন আইনজীবীরা। মামলার এজাহারে শুধুমাত্র প্রকৃত খুনিদের নাম উল্লেখ করলে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সহজ হতো বলেও মনে করেন তারা।

গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড়ে খুন হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খায়রুল আলম জেম। ঘটনার তিনদিন পর ২২ এপ্রিল নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ ও নাম না জানা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা  করেন।  মামলার পর থেকেই অতিরিক্ত আসামি যুক্তের বিষয়টি আলোচিত হয় বিভিন্ন মহলে।

আরও পড়ুন: সাবেক পৌর কাউন্সিলর হত্যা: জামিন পেলেন ৩৪ জন

আরো পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১২ থেকে ১৫ জন অংশ নিয়েছিলেন খায়রুল আলম জেম হত্যার মিশনে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেসবাহুল হক টুটুলসহ ৫ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

মামলার এজাহার ও পুলিশের ভাষ্য ও ৫ আসামির স্বীকারোক্তির বিষয়ে জেলার কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে রাইজিংবিডি। আইনজীবীদের বেশিরভাগেরই ভাষ্য নিরাপরাধ মানুষকে জড়ালে মামলা হালকা হয়ে যায়। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত দোষীরাও খালাস পেয়ে যান।

আরও পড়ুন: সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে উত্তপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম রেজা মনে করেন, যারা দোষ করেনি তাদের আসামি করা হলে মামলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফৌজদারি মামলায় একটি কথা প্রচলিত আছে ‘অপরাধ যার, সাজা তার।’ ভিকটিমের শরীরে যদি ১০টি আঘাতে চিহ্ন থাকে, তাহলে ১০ জনকে আসামি করা যেতে পারে। যদি এমন হয় যে- আঘাতের চিহ্নও নেই, নির্দিষ্ট অভিযোগ। সাক্ষীও বলতে পারে না কে-কী করেছে তাহলে বিচারে সিংহভাগ আসামি খালাস পেয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, আদালতে যাওয়ার আগেই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে নিরপরাধ মানুষকে জাড়ানো হয়েছে তবে তিনি সেভাবে প্রতিবেদন দিতে পারেন। আংশিক সত্য, আংশিক মিথ্যা উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ আছে পুলিশের।

আইনজীবী ড. তসিকুল ইসলাম বলেন, যারা দোষী মামলায় কেবল তাদেরই আসামি করা উচিত। নির্দোষ কাউকে আসামি করলে মামলার মেরিট নষ্ট হয়। দোষী নয় এমন ব্যক্তিদের দোষী প্রমাণ করা সহজ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনজীবীরা ব্যর্থ হন দোষ প্রমাণে। তখন পুরো মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়ে।

আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে কুপিয়ে হত্যা

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক পিন্টু বলেন, কোনো ঘটনা যে কয়জন ঘটিয়েছেন তার চেয়ে বেশি আসামি হয়ে গেলে একটু সমস্যা হয়। তবে দোষ প্রমাণিত না হলে আদালত থেকে অতিরিক্ত আসামিরা খালাস পেয়ে যাবেন।

মামলার এজহারে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও পুলিশ বলছে হত্যা-মিশনে ছিলেন মাত্র ১২ থেকে ১৫ জন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম। তবে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সবার পরামর্শ নিয়েই মামলা এজাহার দিয়েছি। যা হবে পরে দেখা যাবে।’

নিরাপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি তিনি। 

মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়