স্মৃতিঘেরা লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার ঘুরে গেলেন রাষ্ট্রপতি
শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম
নিজ জেলা পাবনা সফরের প্রথমদিনে ছাত্র রাজনীতির স্মৃতিঘেরা ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার ঘুরে গেলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে অতীতের মতো সাধারণের মতো পেয়ে দোকান মালিক, রাষ্ট্রপতির বন্ধু, স্বজন, অনুসারীরা। জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতাও।
১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠার পর ক্রেতাদের আস্থায় লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের নাম সবার মুখে। তিন পুরুষ ধরে চলছে এই মিষ্টান্ন ভান্ডারের ব্যবসা। মধ্য শহরের রায়ের বাজারের এই দোকানে রসগোল্লা, প্যারা মিষ্টি পাবনার গণ্ডি ছাড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছে সারাদেশে। সোমবার (১৫ মে) রাতে হঠাৎ করেই সেখানে হাজির রাষ্ট্রপতি।
পাবনার মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল রাজনীতির আঁতুড়ঘর লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার। স্বাধীনতার পূর্ব সময় থেকেই পাবনার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও ছাত্র নেতাদের আড্ডা বসতো দোকানটিতে। রাজনৈতিক সফরে পাবনায় এসে এই দোকানে বসে মিষ্টি খেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও।
সোমবার (১৫ মে) রাত আটটা। হঠাৎ করেই শহরের ব্যস্ততম আব্দুল হামিদ সড়কে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দৌড়াদৌড়ি। এক পর্যায়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরাও থমকে দাঁড়িয়ে যান। সড়কের দু’পাশে উৎসুক জনতার দৃষ্টি একটি মিষ্টির দোকানের দিকে।
রাজনৈতিক এবং অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আড্ডা ও পদচারণার কারণে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের নামও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কমরেড প্রসাদ রায়, কমরেড মনি সিংহসহ অনেকে এখানে আসতেন। এখানেই সতীর্থদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন। তাই কঠোর নিরাপত্তা বলয় উপেক্ষা করে সরকারি সফরের প্রথমদিনে হঠাৎ করেই রাষ্ট্রপতি ফিরে যান পুরনো স্মৃতিময় আড্ডার জায়গায়।
রাজনৈতিক জীবনে পাবনায় কাটানো সময়ে প্রতিদিন বিকেলে লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারে আড্ডা দিতেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। কর্মজীবনেও পাবনায় যখনই এসেছেন একবার হলেও ঘুরে যেতেন প্রিয় দোকানটিতে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে নিজ জেলায় ব্যস্ত সূচির মাঝেও সেখানে হাজির মো. সাহাবুদ্দিন। শেকড়কে মনে রাখার এমন দৃষ্টান্ত সেখানকার মালিক কর্মচারীদের সঙ্গে অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলেন হাজারো মানুষ।
স্বাধীনতা আন্দোলন ও পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিতে খবর আদান প্রদানের পাশাপাশি গোপনে অর্থ প্রদান করতেন লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ ঘোষ ও তার ছেলে নিমাই চন্দ্র ঘোষ। সে অপরাধে অসংখ্যবার হামলা হয়েছে দোকানটিতে, দেওয়া হয়েছে আগুন। সে অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সেখানে আসায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতারা।
লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ভোলানাথ ঘোষ বলেন, রাত আটটার দিকে রাষ্ট্রপতি হঠাৎ করে দোকানে আসেন। এ সময় রাষ্ট্রপতিকে দেখে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। সফরের প্রথমদিন যে তিনি আমাদের দোকানে আসবেন তা ভাবতেই পারিনি। এত খুশি হয়েছি যে কল্পনা করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি ১০ মিনিট দোকানে অবস্থান করেন। তিনি পুরনো অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন। আগে রাষ্ট্রপতি শহরের রূপকথা সড়কের জলযোগ থেকে সিঙ্গারা ও আলুর চপ খেতেন। আজও তিনি জলযোগ থেকে সিঙ্গারা খেয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে জলযোগের ম্যানেজার ফজলে রাব্বি জানান, বিকাল পাঁচটার দিকে রাষ্ট্রপতির জন্য ৬০ পিস সিঙ্গারা নিয়ে যাওয়া হয়।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, এই আনন্দ ও খুশি শুধু আমার মধ্যে নয়, সারা পাবনাবাসী যখন এই খবর শুনবে সবাই আনন্দিত হবেন যে
পাবনার কৃতি সন্তান তার শেকড়কে ভোলেন নাই। তিনি সাধারণের মতো কতটা অসাধারণ।
পাবনা সদর আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, এই সমস্ত বিষয়গুলি সত্যিই আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তিনি যে আমাদের মানুষ, পাবনার ছাওয়াল, এটা কিন্তু আবারও প্রমাণ হলো।
রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু প্রফেসর শিবজিত নাগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবি ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি পাবনায় প্রেসক্লাব, লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার, মিডিয়া সেন্টার এবং ডায়াবেটিক সমিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। তিনি দেশের রাষ্ট্র প্রধান হওয়ায় আর হয়তো এভাবে আসতে পারবেন না। আমরা তাকে সব সময় মিস করবো।
/এসবি/