ঢাকা     মঙ্গলবার   ১১ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৬ ১৪৩১

জোড়া খুন: বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুলসহ আসামি ৭০

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৭ মে ২০২৩  
জোড়া খুন: বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুলসহ আসামি ৭০

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমানসহ দুই জন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নাম না জানা আসামি করা হয়েছে ৩৫/৪০ জনকে। 

নিহত ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন। তবে, দায়ের করা মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি বলে দাবি করেছেন।  

শনিবার (২৭ মে) দুপুর ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম।

আরো পড়ুন:

মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, কামাল হোসেন ও রাসেল। 

এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন। অন্য আসামিরা হলন- খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ, বিএনপি নেতা জায়দুল ইসলাম জাহিদ, ইলিয়াস আলী ভূইয়া, আল-আমিন, তানভির,  রবিউল ইসলাম রবি, সোহেল, সাদ্দাম হোসেন ভূইয়া, মো. ওয়ালিদ হোসেন, রিফাত, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রউফ সরকার রনি, সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, শামিম সরকার, শহর যুবদলের আহবায়ক চৌধুরী সুমন, যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ,  রুবেল হাসান, চিনিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা, সজিব, নাজমুল ভূইয়া, গোলজার হোসেন, শহিদুজ্জামান, শাকিল চৌধুরী, হানফ সরকার, আল আমিন ওরফে হাদি, ইমাম মেম্বার, বাবুল খন্দকার, রাসেল মিয়া ও কামাল হোসেন ভূইয়া ।  

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর থেকে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন ভুইয়ার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্য সচিব রিফাতের বিরোধ চলছিল। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন  ও সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকআপ গাড়ি ও ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল  করে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভ মিছিলটি  চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় ভেলানগরপার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করেন। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করেন। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করে। এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরো একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যান। এর একদিন পর গতকাল শুক্রবার সাকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যান।

নিহত সাদেকুর রহমানের ভাই ও মামলার বাদী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মামলায় আমি কারো নাম দেয়নি। কারণ আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঘটনা আমার বাড়ির সামনে ঘটেনি। আমি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলছি। বলেছি আপনার তদন্ত করুন। বিনা অপরাধে যেন কেউ মামলায় না পড়ে এই কথা বলে আমি এজহারে সই দিয়ে এসেছি। আমি প্রশাসনের উপর দায় ভার ছেড়ে দিয়েছি।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতারা জানান, নিজেদের মধ্যকার কোন্দলের কারণে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর পরই জেলা বিএনপির সব্বোর্চ্চ পর্যায়ের গুটি কয়েক নেতার স্বার্থ হাসিলের জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের উসকিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়,বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগসহ দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনের উপর হামলা করার জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়।

 বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন ফোনে বলেন, বিএনপিকে দমন করতেই এমন মামলা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়ে ও দলীয় কিছু নেতাদের মদতে পদবঞ্চিতরা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমাদের গাড়ি বহড়ে হামলা ও গুলি করা হলো। একাধিক বার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হলো। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়নি। যার কারণে বারবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। 

নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম জানান ,জোড়া খুনের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং নাম না জানা আরও ৩৫/৪০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন। এ ঘটনায় যুবদলের নরসিংদী সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাইনুদ্দিনসহ মোট তিনজন ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার রাতেই পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন পদবঞ্চিত নেতারা। তারা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। গত ৫ এপ্রিল বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সর্বশেষ গত ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

হৃদয়/ মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়