‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য অস্ত্র নয়, আলোচনা দরকার।’
বান্দরবান সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডে বান্দরবানে বসবাসরত বম, মার্মা, চাকমা, ত্রিপুরা, তংচংঙ্গা, খুমী, লুসাই, খেয়াং, ম্রোসহ ১২টি সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সম্প্রীতির বান্দরবানে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে আলোচনা সভায় সকল সম্প্রদায়ের নেতারা সম্মিলিতভাবে সমাধানের কথা বলেছেন।
সোমবার (২৯ মে) সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বান্দরবান অরুণ সারকী টাউন হলে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সামাজিক নেতাদের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় হেডম্যান হ্রা থোয়াই হ্রী মার্মার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, বান্দরবান জেলা বাংলাদেশে সব থেকে বেশি জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস। সম্প্রীতির বান্দরবান বলেও সারা দেশে পরিচিত ছিল। আজ পাহাড়ে শান্তি চুক্তির পরও সংঘাত হচ্ছে, রক্ত ঝরছে। কেএনএফের সংঘাতের কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরও রক্ত ঝরেছে ও পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীসহ ১১টি সম্প্রদায়ের সহজ সরল জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা পাহাড়ে জুমের উপর নির্ভর করে চলে, তাদের খাদ্যের সংকট দেখা দিতেও পারে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। জাতিগত সংঘাত নিরসন করতে হবে। সকলে সম্মিলিতভাবে সমাধান করতে হবে।’
এ আলোচনা সভায় ১১টি সম্প্রদায়ের ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা, ম্রো সম্প্রদায়ের রাংলাই ম্রো, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সত্যহা পাঞ্জে, নারী বক্তা কৃপা ত্রিপুরা, তংচংঙ্গা সম্প্রদায়ের কাঞ্চন তংচংঙ্গা, খুমি সম্প্রদায়ের লেলুং খুমি, মার্মা সম্প্রদায়ের কৈশৈ প্রু খোকা মার্মা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এই আলোচনা সভায় একমাত্র নারী বক্তা কৃপা ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে সংঘাত হলে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারীদের নিরাপত্তা আজ কোথায়। প্রত্যেক পিতা-মাতা তার সন্তানের নিরাপত্তা চাই। পরিবারের নিরাপত্তা চাই। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে পাহাড়ে এই চলমান সংঘাত সমাধান করা সহজ হবে বলেও মনে করেন এই নারী বক্তা।
এ আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র নয়, শান্তির আলোচনা দরকার। পাহাড়ে সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই বিষয়ে বক্তারা বক্তব্যে বলেছেন। বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি সম্প্রদায় ও বাঙালিসহ ১২টি সম্প্রদায়। প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে ২ জন করে ২৪ জন নেতা নিয়ে কমিটি গঠন করার কথাও বলেছেন। এ কমিটির মূল উদ্দেশ্য থাকবে কেএনএফ সদস্যদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। কেএনএফ এর দাবি-দাওয়া ও কোন অধিকারের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেছে নিয়েছেন এ বিষয়গুলোও বক্তারা বলেছেন।
বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার বম বক্তব্যে বলেন, কেএনএফের সংঘাতের জন্য গোটা বম জাতিগোষ্ঠীতে দায়ী করলে ভুল হবে। গুটিকয়েক মানুষের জন্য গোটা বম জাতিকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন তিনি। এই সংঘাতের কারণে শুধু বম জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, বসবাসরত সকল সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে সংঘাতের কারণে আজ বম পাড়া জনশূন্য হয়েছে। ২ হাজারের বেশি বম জনগোষ্ঠী পাশের ভারত ও মিয়ানমারে দেশান্তরী হয়েছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছে না। গত বছর ২৬ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত এ পরিস্থিতির জন্য সকল বম সম্প্রদায়কে দায়ী করা ঠিক হবে না। যে জাতির হোক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কেউই সমর্থন করে না।
এই আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মার্মা, বান্দরবান কোর্টের আইনজীবী বাসিংথোয়াই মার্মা, বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান ও কারবারি।
/বকুল/