ঢাকা     বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২ ১৪৩১

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে যুবককে পেটালেন ইউপি সদস্য

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৮ জুন ২০২৩  
পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে যুবককে পেটালেন ইউপি সদস্য

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তার ভাই মো. সুমনকে (৩৫) পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে সুমন তার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সুমন উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ রাজীবের বড় ভাই। তারা চরবাদাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক আবুল বাশারের ছেলে ও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচরসীতা গ্রামের বাসিন্দা।

অভিযুক্ত আব্দুর রহিম উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও একই ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি।

ভুক্তভোগী সুমন জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে সুমনদের এলাকা পঞ্চায়েত বাড়ি জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় দুটি অটোরিকশায় কয়েকজন লোক আসে। একপর্যায়ে মামলা আছে বলে তারা সুমনকে তুলে নিয়ে যায়।

পঞ্চায়েত বাড়ি জামে মসজিদ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভুলুয়া নদীর পাশে ফিরোজ মিয়ার প্রজেক্ট এলাকায় তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে সুমন সবাইকে চিনতে পারেন। সেখানে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। ওই লোকজন তার মোবাইলফোন থেকেই ইউপি সদস্য আবদুর রহিমকে কল দেয়। এরপর আবদুর রহিম আসার পরেই তাকে উলঙ্গ করার নির্দেশ দেয়। একপর্যায়ে তার শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ সময় আবদুর রহিমসহ তার লোকজন সুমনকে এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। প্রায় ৩ ঘণ্টা তাকে উলঙ্গ করে রাখা হয়। পরে তার মুখে কাঁদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি বমি করে দেন। এ সময় ফের তার মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুখমণ্ডলে কালো কাপড় বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আব্দুর রহিম ও তার লোকজন।

এর মধ্যে, পরিবারের লোকজন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে পুলিশের কেউই তাকে আটক করেনি। পরে পরিবার ও স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে ঘটনাস্থলে তাকে পায়। খবর পেয়ে রাত ১ টার দিকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে বড়িতে নেওয়া হয়।

সুমন বলেন, ‘আমি বিভিন্নভাবে আব্দুর রহিম ও তার লোকজনের কাছ থেকে পানি চেয়েছি। তারা আমাকে পানি পর্যন্ত দেয়নি। তারা আমার মুখে কাঁদা ও লতাপাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আব্দুর রহিম ঘটনাস্থল পৌঁছার পরই আমার ওপর নির্যাতন শুরু করা হয়।’

ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ রাজীব বলেন, ‘রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আব্দুর রহিমের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিনি আমার হাত ভেঙে দেন। এ ঘটনার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে আব্দুর রহিম ৮ দিন জেল খেটেছেন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এরপর তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমার সঙ্গে শত্রুতার জের ধরেই তিনি সুমনকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রাজীব তার ভাইকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আব্দুর রহিম খারাপ প্রকৃতির লোক। রাজীবদের সঙ্গে তার পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।’ 

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

লিটন/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়