ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটে প্রথম গোপালগঞ্জের জিলহাজ

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ৯ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৭:১১, ৯ জুন ২০২৩
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটে প্রথম গোপালগঞ্জের জিলহাজ

বাবার সঙ্গে জিলহাজ শেখ

মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করলে মফস্বলে থেকেও প্রথম হয়ে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় তার উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মো. জিলহাজ শেখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’  ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন গোপালগঞ্জের এই শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষার নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭৯.২৫ নম্বর। তার এই কৃতিত্বে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সহপাঠীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। 

জিলহাজের বাড়ি গোপালগঞ্জ শহরতলীর পুরাতন মানিকদাহ গ্রাম। তার বাবার নাম শহর আলী শেখ। পেশায় ব্যবসায়ী। মা শিরীন আক্তর গৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিলহাজ তৃতীয়।  

শুক্রবার (৯ জুন) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরাতন মানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি পড়া শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে জিলহাজ ভর্তি হন জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৪.৮৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজের মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃর্তিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন জিলহাজ।

আরো পড়ুন:

এইচএসসির পর থেকে জিলহাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে ৭৯.২৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। এছাড়া এসএসসি, এইসএসি ও খর্তি পরীক্ষার নম্বর মিলে অর্জন করেন ৯৮.৯১ পয়েন্ট। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

জিলহাজ বলেন, ‘পরিবারের সবার আস্থা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। এই শক্তিই কাজে লাগিয়ে আমি ভাল ফলাফল করেছি। কলেজে উঠেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। তবে এসএসসিতে ৪.৮৩ পেয়ে আপসেট ছিলাম। এরপরই ভালভাবে পড়াশোনা করি। সেখান থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য গোপালগঞ্জের স্থানীয় কোচিং সেন্টারে ভর্তি হেই। তারা আমাকে সহযোগীতা করেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো ঘণ্টা হিসাবে পড়াশোনা করিনি। রুটিন হিসাবে প্রতিদিনের পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার ইচ্ছা লেখাপড়া শেষে অ্যাডমিন ক্যাডার হবো। সেখান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’

জিলহাজের সহপাঠী আরাফাত রহমান তমাল বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। ও প্রথম হয়েছে। এতে আমার প্রচণ্ড ভালো লাগছে। আশাকরি সে ভাল অবস্থানে গিয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে।’ 

জিলহাজের বড় ভাই মিনহাজ শেখ বলেন, ‘আমি আমার ছোট ভেইকে সব সময় পড়ালেখায় সাহায্য করেছি। কিভাবে পড়তে হবে, কি কি বিষয় দেখতে হবে। তার এই রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কাজ করবে সে।’

জিলহাজের মা শিরীন আক্তার বলেন, ‘ছেলের রেজান্টে আমি খুবই খুশি। পড়ালেখার জন্য ওকে কখনে বকা দিতে হয়নি। পড়ালেখা সে নিজের ইচ্ছা মত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সে তার পড়ালেখা আগের মতই চালিয়ে যাবে। পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে ফিরে আসবে এই দোয়ায় করি।’

বাবা শহর আলী শেখ বলেন, ছোট বেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি জিলহাজের আগ্রহ ছিল। কখনো ধমক দিয়ে ওকে পড়তে বসাতে হয়নি। আমার ছেলের রেজান্টে আমি খুব খুশি। এখন উচ্চ শিক্ষা শেষ করে পছন্দ মত পেশা বেছে নিয়ে সবার জন্য কাজ করবে এমনটাই আশা করছি।’

হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নিয়ম ও নৈতিকতার মাধ্যমে লেখাপড়া করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃস্টান্ত জিলহাজ শেখ। কলেজর পড়ার সময় ওর মেধা, ইচ্ছা শক্তি ছিল প্রবল। আমরা শিক্ষকরা ওকে সব সময় গাইড করেছি। পরীক্ষায় সে ভাল ফলাফল করেছে। ওর এই ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত।’

মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়