ঢাকা     রোববার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

২৩ বছর পর মা-মেয়ের দেখা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২৩ জুন ২০২৩   আপডেট: ২১:৩৩, ২৩ জুন ২০২৩
২৩ বছর পর মা-মেয়ের দেখা

মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ভারতে চলে যান ফজিলা খাতুন নেছা। আজ তাকে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়

মা এখন কেমন আছেন? এখন তিনি দেখতেই বা কেমন হয়েছেন? এমন হাজারো প্রশ্ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য রেখায় দাঁড়িয়ে বারবার চিন্তায় ঘুরে ফিরে আসছিল পিঞ্জিরা আক্তারের মনে। অবশেষে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। দীর্ঘ ২৩ বছর পর শুক্রবার (২৩ জুন) মা ফজিলা খাতুন নেছাকে ফিরে পেয়েছেন তিনি। এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া চেকপোষ্টে দিয়ে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন হারিয়ে যাওয়া ফজিলা খাতুন নেছা। ত্রিপুরা সীমান্তের এপারে ফজিলা খাতুন নেছাকে স্বাগত জানাতে নোম্যান্সল্যান্ডে অপেক্ষায় ছিলেন পিঞ্জিরা আক্তার, তার স্বামী আব্দুল হালিম শেখ এবং তার মামাতো ভাই মো. জালাল উদ্দিন।

২০০০ সালে ফজিলা খাতুন নেছা নিখোঁজ হন। তিনি ভারতে গেছেন কীভাবে তা পরিবারের কারোরই জানা নেই। তবে, ফজিলা খাতুন নিখোঁজ হওয়ার আগে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে জানিয়েছে পরিবার।

আরো পড়ুন:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ ফজিলা খাতুন নেছাকে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্য রেখায় নিয়ে আসেন। 

ফজিলা খাতুন নেছার মেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার জানান, আত্মীয় স্বজনের কাছে শুনেছি, আমার বয়স যখন দুই-তিন বছর তখন বাবা মারা যান। তখন আমাদের নিয়ে মা কষ্ট করে জীবন কাটাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আমাদের একটি এতিমখানায় দিয়ে দেন। এরপর থেকেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবনযাপন করছিলেন তিনি। পরে মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এতিমখানা থেকেইএকদিন খবর পাই মা হারিয়ে গেছেন। তখন আমার বয়স ১২ বছর।’ 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষখালী গ্রামের বাসিন্দা পিঞ্জিরা আক্তার আরও জানান, এতিমখানায় পালিত হই। এরপর বিয়ে হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও মায়ের কোনো সন্ধান পায়নি। মাকে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম। এতদিন আমাদের কাছে তিনি মৃত ছিলেন। কিন্তু গত বছরের আগষ্ট মাসে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পাই মা জীবিত আছেন এবং তিনি ভারতে রয়েছেন।

ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ জানান, দীর্ঘ ২৩ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মাকে তার সন্তানের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। তার পরিবারের লোকজন তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। পরবতীর্তে কোনো এক সময় তাকে ত্রিপুরায় পাওয়া যায়। পরে ত্রিপুরার মর্ডাণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, ত্রিপুরা পুলিশ আমাকে তার (ফজিলা খাতুন নেছা) কথা বলে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার তথ্য প্রেরণ করে নাগরিকত্ব যাচাই করে ভারত সরকারকে অবহিত করি। ভারত সরকারের অনুমতি পাওয়ার পর আজকে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। 

এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ভারতীয় হাই কমিশনের প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক চৌধুরী, মো. আল আমিন, ৪২ বিএসএফ আগরতলা আইসিপির কোম্পানি কমান্ডার ধিবেকান দিমান, আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভূইয়া, বিজিবি আখাউড়া আইসিপির ইনচার্জ মো. শাহআলম, ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসাইন, এএসআই দেওয়ান মুর্শেদুল হক প্রমুখ।

মাইনুদ্দীন/ মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়