পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে ত্রিপুরা পল্লীর ব্রিজ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর ভেঙে যাওয়া ব্রিজ
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর একমাত্র ব্রিজটি ভেঙে গেছে। একই সঙ্গে ত্রিপুরা পল্লীর টিলায় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে সেখানে বসবাসকারীদের।
বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে এতথ্য জানান ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা।
চিত্তরঞ্জন দেববর্মা জানান, বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় টিলাটিতে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সেখান বসবাসরত ২৪টির মধ্যে ৫টি পরিবারকে অনেক আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ত্রিপুরা পল্লীতে যাতায়াতের একমাত্র ব্রিজটি পাহাড়ি ঢলের কারণে ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় পল্লীবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, ছড়ার পাশে থাকা টিলার অনেকাংশ ধসে পড়েছে। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ১৯টি পরিবার এখনো সেখানে বসবাস করছেন।
চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি। এই পাহাড়ে আমাদের জন্ম। মৃত্যুও যেন এখানেই হয়। এ স্থানটা আমাদের কাছে প্রিয়। পাহাড় রক্ষা করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। আমরা টিলা কাটি না। টিলা রক্ষায় কাজ করি। তবে টিলা কাটা চক্রের কাছে আমরা অসহায়। জন্মের পর ছড়াগুলো দেখলাম ছোট। এখন দিন দিন বড় হচ্ছে। বাকি দিনে কী হবে জানি না। আমাদের বসবাস পাহাড়ের টিলার ওপরে। টিলায় বসবাস নিরাপদ মনে করি। আর সবাই মিলেমিশে একত্রে থাকি। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও পাহাড়-টিলায় বাস করে গেছেন।
পাহাড়ি ঢলের কারণে ধসে পড়েছে পাহাড়ের একটি অংশ
তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীনের পর সরকারি সিদ্ধান্তে বনবিভাগ আমাদের সড়কের কাছের টিলায় বসবাসের ঠিকানা করে দেয়। সেই থেকে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এই টিলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া থেকে বিভিন্ন চক্র নানা সময়ে বালু উত্তোলন করছে। তাই আজ টিলা ধসের কারণ হয়ে উঠেছে।
পল্লীর সহকারী হেডম্যান আকাশ দেববর্মা জানান, বৃষ্টির কারণে ২০১৭ সালে পল্লীর টিলা ধস শুরু হয়। পল্লীর ২৪টি পরিবারের মধ্যে সেই সময় তিনটি পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। তারা টিলার অন্যত্র গিয়ে থাকছে। পরে আরো দুটি পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানে পুরো টিলাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উদ্যানের অন্যান্য ছড়ায়ও টিলা ধসে পড়ছে। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ছে গাছপালা। টিলা রক্ষায় প্রাচীর নির্মাণ করা দরকার। আর তাতে বড় আকারের বাজেট প্রয়োজন।
সাতছড়ি বন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এই উদ্যানটি অনেক প্রিয়। এখানে যাতায়াত সহজ। রয়েছে বন্যপ্রাণির বিচরণ। বৃষ্টিতে এ পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীসহ বিভিন্ন টিলা ধসে পড়ছে। ব্রিজ ভেঙে গেছে। দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।
মামুন/ মাসুদ