ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১৭ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ২০:১৫, ১৭ জুলাই ২০২৩
দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ : ফখরুল

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খুলনায় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথে ফয়সালা করে আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করব।’

ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৭ জুলাই) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে এ সমাবেশ শুরু হয়।

দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিবার ফিরিয়ে দিতে যুদ্ধে নেমেছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশ আজ ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ইতোপূর্বে দেশে যত সংকট এসেছে, তার চেয়ে সবচেয়ে বড় সংকট এখন চলছে। এই সংকট থেকে উত্তোরণই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমরা যুদ্ধে নেমেছি। আর তরুণরাই গণতন্ত্র রক্ষার ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।’’

আরো পড়ুন:

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে হাসিনা সরকার। তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এর আগে তার বাবা দেশে একনায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। এ অবস্থায় একমাত্র বিএনপিই দেশে নিরাপদ নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতে পারবে। 

তিনি বলেন, ‘যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকে, তাহলে দেশে নির্বাচন হবে না। আমরা নির্বাচনে যাব না।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘ন্যাড়া বার বার তালতলায় যায় না’— উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিষ্কার কথা: হবে না, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।’ এ কারণে সময় নষ্ট না করে তিনি শেখ হাসিনাকে দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানান।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা নিজেদের অধিকার পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। এ কারণে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যারা যোগ্য, তাদের আনতে হবে। নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।

আওয়ামীলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা হিরো আলমকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। আজ হিরো আলম ভোটকেন্দ্রে গেলে তাকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাকে বের করে দেয় এবং মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। দেশে ডেঙ্গুতে মানুষ ৭৬ জন মারা গেছে। অথচ মানুষকে বিপদে ফেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফর করছেন। তাদের দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রমুখ। সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গুম, খুনের শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। চেয়ার দুটিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়।

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, সমাবেশ যাতে সফল না হয়, সেই জন্য বাধা দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীনরা খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় বাস বন্ধ করে দিয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রোববার (১৬ জুলাই) কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

পূর্বনির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে জড়ো হন দলের নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়। খুলনায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমাবেশমঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তরুণ ভোটারদের অংশ নেওয়ার জন্য উজ্জীবিত করতে এই কর্মসূচি পালনে ঘোষণা দেয় দলটির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। দেশের ছয় বিভাগে এই সমাবেশ করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একত্রে বগুড়ায় এবং সিলেটে এই কর্মসূচি পালন করেছে।
 

নুরুজ্জামান/বকুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়