বরগুনার ১৮৯ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ভোগ চরমে
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
ঝুঁকিপূর্ণ একটি সেতু
সংস্কারের অভাবে বরগুনার জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ১৪৭টি লোহার সেতু ও ৪২টি পাকা সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সেতু ভেঙে নদী ও খালে পড়ে আছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে আছে কয়েক লাখ মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরগুনা জেলা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় ‘হালকা যান চলাচল প্রকল্পের অধীনে’ কয়েক শত লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ২৮টি, বেতাগীতে ১৮টি, বামনায় ৪২টি, তালতলীতে ৭টি, আমতলীতে ২২টি এবং পাথরঘাটায় ৩০টি লোহার সেতুগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে নির্মাণাধীন বরগুনার আমতলীতে ৯টি, সদরে ১৭টি, তালতলী ৪টি, পাথরঘাটায় ৭টি ও বেতাগীতে ৫টি পাকা সেতু চলাচলের অনুপযোগী। অনেক সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল, জাওয়াদ, ইয়াসসহ বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিরিক্ত মালবোঝাই পরিবহন চলাচল করায় সেতুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলো সেতুর হাতল ও অ্যাঙ্গেলসহ অন্য মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ধসে পড়া কিছু সেতুর স্থানে স্থানীয়রা বাঁশ, সুপারিগাছ, সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করেছেন। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
আমতলী চাওড়া খালের উপর নির্মিত সেতু ২০২১ সালের জুন মাসে ভেঙে পড়ে। লোচা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সুবন্ধি খালের ওপর নির্মিত সেতুর মাঝ বরাবর স্ল্যাব ভেঙে গেছে ২০১৮ সালে।
বরগুনা সদর উপজেলা গৌরিচন্না ইউনিয়নের বিবেকচত্তর এলাকার লোহার সেতুটি দেবে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে ৬ বছর ধরে।
সদরের ভাড়ানি খালের আলিয়া মাদ্রাসা সড়কের পাকা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে তিন বছর ধরে।
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মো. মৃদুল মাহবুব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পূর্ব বরগুনার সব মানুষ এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। আলিয়া মাদ্রাসা, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জিলা স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করে। এলজিইডিকে জানিয়েছি, তারা দায়সারাভাবে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম শেষ। এই সেতু যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে। ঘটবে বড় রকমের দুর্ঘটনা।’
বরগুনা সদর উপজেলার বিবেকচত্তর বাসিন্দা মো. সগির হোসেন বলেন, ৬ বছর ধরে সেতুর মাঝ বরাবর দেবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে সেতুটি। এই সেতু পুনর্নির্মাণ করা দরকার।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলীর হলদিয়া বাজারের কাছে সুবন্ধী খালের ওপর নির্মিত লোহার সেতুর হাতল ও অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরেছে। ওপরের স্ল্যাবে ফাটল ধরেছে।
হলদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল প্যাদা বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারও মানুষ পারাপার করে। বর্তমানে সেতুটি পারাপারের অনুপোযোগী। যে কোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে।
লোচা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সুবন্ধি খালের ওপর নির্মিত সেকুর পাশের চাওড়া লোচা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, এই সেতুটি কয়েক বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, মেরামতের উদ্যোগ নাই।
আমতলীর মহিষডাঙ্গা এলাকার সেতু দিয়ে সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। কিন্তু দুই বছর ধরে সেতুটি ভেঙে খালে পরে আছে। স্থানীয়রা মিলে ড্রামের ওপর কাঠ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পোহাচ্ছে।
স্থানীয়রা ওই স্থানে সাঁকো বানিয়ে খাল পারাপার হচ্ছে। সেই সেতু দিয়ে চলাচল এখন খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মল্লিক বলেন, ‘আমার এলাকায় পাঁচটি সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। এসব সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না।’
এ ছাড়া দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকাসহ আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এসব সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে এলজিইডি বরগুনা কাযালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, ‘এসব সেতু পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেতুগুলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবভুক্ত করা হয়েছে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরাও বসে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েক বার এসব ব্রিজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। চলতি বছরের শেষের দিকে এসব ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে।’
/বকুল/