গঠনতন্ত্র অমান্য’র অভিযোগ
পাবনা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে নোটিশ
শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম
সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন
গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে খেয়াল খুশি মতো একের পর এক উপজেলা কমিটি করার অভিযোগ উঠেছে পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়।
একাধিকবার তাদের সতর্ক করার পরেও কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করায় অনিয়মের কারণ জানতে চেয়ে জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন কমিটি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এই দুই শীর্ষ নেতা।
গত ১ আগস্ট পাঠানো স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন সুজানগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর কমিটি থেকে ৮ জনকে বাদ দিয়ে নতুন ৮ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে তারিখ অপরিবর্তিত রেখে ৩১ জুলাই প্রকাশ করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদক।
গঠনতন্ত্রে আহ্বায়ক কমিটি ৩১ সদস্যের বেশি করার নিয়ম না থাকলেও তারা গত ৩১ জুলাই আমিনপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটি ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট করেছেন। শুধু তাই নয়, কমিটি প্রকাশের কিছুক্ষণ পর তা পরিবর্তন করে একই তারিখ দেখিয়ে কমিটির সদস্য ৪৩ জন করা হয়েছে।
একইভাবে করা হয়েছে ওই থানার একাধিক ইউনিয়ন কমিটিও। রানীনগর ইউনিয়ন কমিটিও ঘোষণার পর পছন্দের লোক বাদপড়ায় তা পরিবর্তন করে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে সাঁথিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে ৩১ সদস্যের বাইরে ৫৪ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, বার বার সতর্ক করার পরও গঠনতন্ত্রের কোন ক্ষমতাবলে আপনারা একের পর এক অসাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকান্ডের জন্য কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ৭ আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রেরণের জন্য জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ণ ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সাঁথিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রায় সকল যুগ্ম আহ্বায়কসহ ৫৪ সদস্যের প্রায় ৫০ জন সদস্যই পদত্যাগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে যোগ্যতা বিচার ছাড়াই কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি নেতার স্বজনদেরকেও দেওয়া হয়েছে শীর্ষ পদ।
সাঁথিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদ্য পদত্যাগ করা যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদি হাসান রুবেল বলেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন গোপনে প্রায় ২২ লাখ টাকা নিয়ে শীর্ষ পদের দায়িত্ব দিয়েছেন শামসুল হক স্বপন প্রামাণিককে। অনিয়ম দুর্নীতির এই কমিটি তৃণমূল নেতাকর্মীরা মেনে নেয়নি। কমিটি প্রত্যাখান করে ৫৪ সদস্যের প্রায় ৫০ জনই পদত্যাগ করেছেন। ত্যাগী কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে আজ্ঞাবহ লোকেদের কাছে পদ বিক্রি করেছেন রুহুল আমিন। সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলুও এই অনিয়মে বাধা দেননি।
কারণ দর্শানোর নোটিশ
বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রুবেল রহমান বলেন, গত ৩১ জুলাই আমিনপুর থানায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে বেড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়কের শ্যালক শোভনকে। তার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। পূর্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মত কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নাই। অথচ তাকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে রাজনীতি করলেও আমি অবহেলিত।
এদিকে, কমিটি গঠনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মতামত না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারাও।
আমিনপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী খান বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের থানা কমিটির ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে এরকম কিছু হতে পারে আশংকা থেকে আমরা সবার মতামতের ভিত্তিতে সমন্বয় করতে বলেছিলাম। যেনো দল সুসংগঠিত হয়। তারা সেটি করেনি।
পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, আমার কোনো মতামত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেয়নি। তড়িঘড়ি করে রাতারাতি তারা কেনো কমিটি করলেন সেটিও আমার বোধগম্য নয়। আবার সেটি নিয়ম মেনেও করা হয়নি। যোগ্য অনেককে বাদও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নেতাকর্মীদের মাঝে একটি বিভাজন সৃষ্টি করবে। এই সময়ে এটি দলের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু বলেন, কাজ করলে অভিযোগ থাকবেই। অনেক সংগঠন সমালোচনা বা অভিযোগের ভয়ে কমিটিই দিচ্ছেন না। আমরা দিচ্ছি জন্য অভিযোগ আসছে। সংগঠন কারণ জানতে চেয়েছে। আমরা তার ব্যখ্যা দেবো। তবে সব অভিযোগ সত্য নয়। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, সাবেক ছাত্রনেতাদের নেতৃত্ব দিতে কমিটির সদস্য সংখ্যার ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। সেটির জবাব আমরা কেন্দ্রকে দিয়েছি। স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের সকলেই চান তার পছন্দের লোক কমিটিতে থাকুক। কিন্তু এখানে পদসংখ্যা তো নির্দিষ্ট। অনেকেই পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা রটনা করছেন। পদবাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, এর আগে গত এপ্রিল মাসে চাটমোহর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন নিয়ে পদবাণিজ্যের একটি অডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
/টিপু/