লক্ষ্মীপুরে আমন-সবজি ক্ষেত পানির নিচে
জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম
বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া কমলনগর ও রামগতি উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে। এরমধ্যে কমলনগর চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জে একটি রাস্তা ভেঙে জনপদে পানি ঢুকেছে। এছাড়া রামগতির চর রমিজ ও চর আবদুল্লাহসহ বিভিন্নস্থানে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, গত শনিবার সকাল থেকে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে শহরের কলেজ রোড, পিটিআই মোড়, শেখ রাসেল সড়ক, হাসপাতাল রোডসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদেরকে কাজ করতে দেখা গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর ৮১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। খরার কারণে কৃষকরা পুরোদমে আবাদ করতে পারেননি এই ফসলটি। কিন্তু জোয়ারের পানিতে ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ও ৬০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ৪ দিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রামগতি ও কমলনগরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। এ জনপদের ৩২ কিলোমিটার উপকূলে বেঁড়িবাধ না থাকায় জোয়ারের পানি নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত করেছে। নদীর পানি বসত বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
রামগতির চর রমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম দিদার বলেন, জোয়ারের কারণে দুটি পাকা ও ৪টি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। মানুষ দুপুর এবং রাতে চুলায় আগুন ধরাতে পারছে না। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। তাদের কষ্টের শেষ নেই।
রামগতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, রামগতিতে বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টরের রোপা আমন ও ২৪৭ হেক্টর জমির বীজতলার আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ১০৫ হেক্টর জমির শাকসবজি পানিতে ডুবে আছে। পানি নামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, কমলনগরে ৭-৮টি গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে গেছে। এরমধ্যে চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ এলাকার একটি রাস্তা ভেঙ্গে জনপদে পানি ঢুকেছে। এতে ১৫-২০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান ও সবজির ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়সহ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমনের চারা রাখা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, জোয়ারে গ্রামীণ সড়ক ও ঘরবাড়ি ক্ষতির বিষয়ে ইউএনওরা কাজ করছেন। প্লাবিত হওয়া এলাকায় দুইটি আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির যে তালিকা পাওয়া গেছে, তা ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
লিটন/ মাসুদ