ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

অভাবে অসুস্থ স্বামীকে নদের পাড়ে রেখে গেলেন স্ত্রী!

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৮, ৮ আগস্ট ২০২৩  
অভাবে অসুস্থ স্বামীকে নদের পাড়ে রেখে গেলেন স্ত্রী!

কিছুদিন ধরে ‌‌‘বার্জারস’ নামক এক কঠিন রোগে আক্রান্ত চাতাল শ্রমিক চাঁন মিয়া (৪০)। সাধ্যমত চেষ্টা করেও স্বামীকে ‍সুস্থ করতে পারেননি স্ত্রী মিতা বেগম। কাজকর্মে অক্ষম চাঁন মিয়ার শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। যে কারণে দরিদ্র এই দম্পতি কোথাও বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছিলেন না। এই কারণে গত পাঁচ দিন আগে বগুড়ার নাগর নদের পাড়ে স্বামী চাঁন মিয়াকে রেখে জীবিকার তাগিদে ঢাকা যান স্ত্রী মিতা বেগম।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিষয়টি জানতে পেরে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ চাঁন মিয়াকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।

চাঁন মিয়া বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের পাওগাছা তালপুকুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের ছেলে।

আরো পড়ুন:

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর দশেক আগে পাশ্ববর্তী কাহালু উপজেলার মিতা বেগমকে বিয়ে করেন চাঁন মিয়া। তাদের সংসারে আট বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম দিকে চাঁন মিয়া স্ত্রী সন্তান নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে একত্রে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে তার (চাঁন মিয়ার) মা আসমা বেগম মারা যাওয়ার কারণে বাবা আব্দুল জব্বার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মা আসায় বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কও ভালো যাচ্ছিল না। এরপর জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিভিন্ন এলাকার চাতাল মিলে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন চাঁন মিয়া। সর্বশেষ গত এক বছর ধরে শাজাহানপুর উপজেলার রাণীরহাটে একটি ভাড়া বাসায় ছিলেন তিনি। কিছুদিন ধরে চান মিয়া বার্জারস’সহ নানা জটিল রোগে ভুগতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কর্মঅক্ষম হয়ে পড়ায় সংসারে অভাবও বাড়তে থাকে। ধার দেনা করে স্ত্রী মিতা বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করিয়েছেন। পরে মিতা বেগম অভাবের কারণে স্বামীকে চিকিৎসা করাতে না পেরে নাগর নদের তীরে রেখে আসার সীদ্ধান্ত নেন। গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মিতা বেগম তার স্বামী চাঁন মিয়াকে আদমদীঘির নাগর নদের পাড়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে ত্রিপল দিয়ে ঘর বানিয়ে কিছু শুকনা খাবার ও খাবারের জন্য পানি দিয়ে চলে আসেন। এরপর তিনি (মিতা) জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান। 

চাঁন মিয়ার স্ত্রী মিতা বেগম জানান, চাঁন মিয়াকে সুস্থ করে তোলার জন্য বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার দেনা করে চিকিৎসা চালিয়ে গেছি। চিকিৎসা বন্ধ করায় ‘বার্জারস’ নামের রোগের কারণে তার কাছে গেলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এজন্য কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে তার নানির বাসা কাহালুতে রেখে অর্থ উপার্জনের জন্য বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে আসি।   

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মানবিক কারণে অসহায় চাঁন মিয়াকে নাগর নদের আদমদীঘি অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে তার।

এনাম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়