রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ৩৭১ পাহাড় ধস
রাঙামাটি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে
টানা ৬ দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত টানা ছয় দিনে জেলার ১০ উপজেলায় ৩৭১টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের পাহাড় ধস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০৬ ঘরবাড়ি । ১৮টি ব্রিজের আশপাশে ক্ষুদ্র পরিসরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, প্রায় ১২৯৩ একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটির চার উপজেলার ২২ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯টি বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে মো. জুয়েল নামে এক শিশু নিখোঁজ আছে। সোমবার বরকল উপজেলায় পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ যুবককে এখনও পাওয়া যায়নি। জেলায় মোট ২৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৪ জন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯০০ নারী, শিশু ও পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট বাজারের আশপাশের এলাকা, বাঘাইছড়ি পৌরসভার ১- ৭ নং ওর্য়াড এবং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওর্য়াড মারিশ্যা ইউনিয়ন তুলাবান, আমতলী ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মৎস পুকুর ও মাছের ঘের ও সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসকারী স্থানীয়দের সতর্ক করে মাইকিং করে সকলকে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বাঘাইছড়িতে বর্তমানে ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র জমির হোসেন বলেন, বন্যা কবলিত ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে।
এদিকে, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমি বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্র আসার জন্য অনুরোধ করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক পর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করা হলে তিনি দ্রুত ২০ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেন।
এদিকে, রাঙামাটির সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু মারমা বলেন, আমাদের পুরো ইউনিয়ন পানিবন্দি। হ্রদে তীব্র স্রোত থাকায় সরকারি খাবার পৌঁছাছে না। একদিকে, খাবার সংকট অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাব, সবমিলে মহাদুর্যোগ চলছে এখানে।
টানা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালের দিকে রাঙামাটি শহরের সিভিল সার্জন বাংলো এলাকার আশপাশে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। তবে এত কেউ হতাহত হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এলাকার বসবাসরত ১৭ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রাঙামাটিতে প্রবল ভারী বর্ষণের ফলে জেলার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অপরদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে রাঙামাটি জেলার প্রায় ৮০টির মতো পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সড়কের বিভিন্ন অংশে বেশকিছু ক্ষতি হয়েছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা বর্ষণে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা কাজ করছেন। এছাড়া, সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইলে তারাও সহায়তা করছে।
বিজয় ধর/ইভা