বাঘাইছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সাজেকে ৩০০ পর্যটক এখনো আটকা
রাঙামাটি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির জেলার বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে ওইসব এলাকায় পাহাড় ধসেরও ঘটনা ঘটেছে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। বাঘাইছড়ির বন্যা পরিস্থিত অবনতি হওয়ায় এই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদে পানি ঢুকে পড়ে। এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডসহ ৮টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সাজেকে এখনো আটকা রয়েছেন ৩০০ পর্যটক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির সঙ্গে দীঘিনালার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় মাটি ধসে পড়েছে। এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে। পাহাড়ের পদদেশে এবং পাহাড়ের ওপর বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ৫০০ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার ও খিচুরি বিতরণ করা হয়েছে।
এর আগে, বাঘাইছড়ি উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার বন্যার পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয় মো. জুয়েল নামে এক শিশু। এছাড়া, গত সোমবার বরকল উপজেলায় পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া যুবককে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছি। আমি বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্র আসার জন্য অনুরোধ করছি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছয় দিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটির ১০ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের পাহাড় ধস হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫৯৯টি। আশ্রয়ণের ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৮টি। ৩৩৬৮ একর ফসলি জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার হচ্ছে ১৩০১টি।এতে ৬৪০৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। রাঙামাটির চার উপজেলার ২৮ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা ৯টি বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় ১২টি সড়কে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদুতের খুটি নষ্ট হয়েছে ২১টি স্থানে।জেলায় মোট ২৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্ষন্ত ৫৪৩১ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। রাঙামাটি সদরে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯০০ নারী, শিশু ও পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া অব্যাহত রেখেছেন।
জুরাছড়িতে ত্রাণ বিতরণ: বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। আজ জুরাছড়ি উপজেলা সদর থেকে মৈদং, দুমদুম্যা ইউনিয়নে যান তারা। এছাড়াও জুরাছড়ি সদর ইউনিয়নে ঘিলাতুলী, সামিরা, এবং মৈদং ইউনিয়নে শিলছড়ি বাজার পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ খবর নেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিসট্রেট মো. মাইনুল ইসলাম খান। এসময় দুর্গতদের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমার নেতৃত্বে মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে পরিদর্শনে করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মু. জাকির হোসেন।
মু. জাকির হোসেন বলেন, বৃষ্টি ও বন্যায় কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি কৃষকদের বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে ভবিষ্যতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা কাজ করছেন।
বিজয়/ মাসুদ