ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও ১: রমেশ চন্দ্রের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে ৩ নেতা

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২২, ১২ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৯:৩৭, ১২ আগস্ট ২০২৩
ঠাকুরগাঁও ১: রমেশ চন্দ্রের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে ৩ নেতা

বাম থেকে: রমেশ চন্দ্র সেন, অরুণাংশু দত্ত টিটো, মুঃ সাদেক কুরাইশি, সাহেদুল ইসলাম সাহেদ

ঠাকুরগাঁও ১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি পাঁচ বার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই সময়কালে দলীয় মনোনয়ন পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি তাকে। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রমেশ চন্দ্র সেনের বিপরীতে স্থানীয় তিন নেতা প্রার্থী হওয়ায় দৌঁড়ে রয়েছেন। 

রমেশ চন্দ্র সেন ছাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত টিটো, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেক কুরাইশী, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম খাদেমুল ইসলামের ছেলে ও বাংলাদেশের হয়ে দুবাইয়ে মিনিস্টার এন্ড ডেপুটি কনসাল জেনারেল সাহেদুল ইসলাম সাহেদ।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি ১৯৯৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উপনির্বাচন হয় ওই আসনের সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলাম ১৭ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে মারা যাওয়ার কারণে। পরের বার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মির্জা ফখরুল আলমগীরের কাছে তিনি হেরে যান রমেশ চন্দ্র সেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বার, ২০১৪ সালে তৃতীয় বার এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের সরকারে ও দলে বর্নিল রাজনৈতিক জীবন এই সংসদ সদস্যের। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্তাভাজন হিসেবে বিবেচিত তিনি। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সরকারে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৫ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকরা রমেশ সেন ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।

৮৪ বছরে পা দেওয়া এই নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থী পেলে আমি আসন ছেড়ে দিতে রাজি আছি। তবে এই আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় হঠাৎ করে নতুন কারও উপরে ছেড়ে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।’ 

তবে বয়স ও কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় রমেশ চন্দ্র সেনের এবার মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে বলে অনেকে মনে করছেন। এর সুযোগে দলীয় মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন জেলার তিন হেভিওয়েট নেতা। তাই প্রথম বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেতে বেগ পেতে হবে রমেশ চন্দ্র সেনকে।  

ইতোমধ্যে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত টিটো। এলাকায় তিনি বেশ প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। ঠাকুরগাঁও ১ আসনে প্রায় ৩১ শতাংশ ভোটার হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে থাকবেন বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দীর্ঘ সময় তৃণমূলে কাজ করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। উপজেলায় কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে তার সুনাম রয়েছে।  

অরুণাংশু দত্ত টিটো রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের জনগণ এখন নতুন মুখ খুজছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এই নির্বাচনি এলাকায় আমি জয় পেয়েছি। আশা করি, এই অভিজ্ঞতা আমি কাজে লাগাতে পারব। তাই এবার আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।’ 

ঠাকুরগাঁও ১ আসনের পরবর্তী মুখ হিসেবে যে রাজনীতিকের নাম সবচাইতে বেশি আলোচনায় রয়েছে, তিনি তরুণ নেতা সাহেদুল ইসলাম সাহেদ। সাহেদ সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম খাদেমুল ইসলামের ছেলে ও বাংলাদেশের হয়ে দুবাইয়ে মিনিস্টার এন্ড ডেপুটি কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই অবস্থানে যাওয়ার পর থেকে সাহেদের প্রতি সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুনজর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশে আসলে তিনি সবটুকু সময় নির্বাচনি এলাকায় দিচ্ছেন। নিজেকে এমপি প্রার্থী জানিয়ে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বাবা টানা তিন বার এ আসনের এমপি ছিলেন। সেই সুবাদে এলাকায় বেশ পরিচিতি আছে সাহেদের। 

সাহেদুল ইসলাম সাহেদ বলেন, ‘এলাকার মানুষের জন্য নিজের অর্থায়নে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছি। মাঠপর্যায়ে আমার প্রস্তুতি খুব ভালো। মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।’  

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুঃ সাদেক কুরাইশী। সফলতার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। শান্ত ও ভদ্র স্বভাবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন এই নেতা। দীর্ঘ সময়ে দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে দলের হাল ধরার পুরস্কার স্বরূপ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই বার ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও প্রথমবারের মতো সরাসরি নিজের প্রার্থী হবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

মুঃ সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘অনেক আগে থেকে নীরবে দলীয় মনোনয়ন কিনে যাচ্ছি। তবে এবার আমি জোর প্রার্থী। এবার আমি এমপি হতে চাই। এর জন্যে সর্বস্তরে আমার যোগাযোগ চলছে।’

ঠাকুরগাও ১ আসনে ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ লড়াই নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকান থেকে দলীয় কার্যালয়, সর্বত্র আলোচনার প্রধান অনুষঙ্গ, কে হচ্ছে ঠাকুরগাঁও ১ এ নৌকার মাঝি। নৌকা মনোনয়নে আলোচিত চার নেতার যেই মনোনয়ন পাবেন, তাকেই স্থানীয় নেতাকর্মীরা সদরে গ্রহণ করবে বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবলুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও ১ আসনে রমেশ চন্দ্র সেন চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এর মাধ্যমে তিনি নিজ জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। আর যে সকল নতুন মুখের কথা বলা হচ্ছে। তারা মনোনয়ন প্রত্যাশী বা এমপি প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ হতে পারে, কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে প্রত্যেকে বেশ জনপ্রিয় ও কর্মীবহুল নেতা। দীর্ঘ সময়ের পরিচিতি ও সুনামকে পুঁজি করে তারা এমপি হবার যোগ্যতা রাখেন। তাই ঠাকুরগাঁও ১ আসনের জন্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’  

  /বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়