ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে উধাও হন মাহাতাব-শাপলা দম্পতি

শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০১, ১৩ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ২২:৩৩, ১৩ আগস্ট ২০২৩
ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে উধাও হন মাহাতাব-শাপলা দম্পতি

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় পালাতক মাহাতাবের বাড়ি

এলাকায় ভ্যান চালানো ও কৃষিকাজ করতেন মাহাতাব হোসেন (৩৫)। তার স্ত্রী শাপলা খাতুন (২৪) বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। তাদের আয়ে সংসার চলতো মোটামুটি। গত ১৫ দিন আগে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন এই দম্পতি। এরপর থেকেই তাদের আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে জানা যায়, গতকাল শনিবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পুলিশের অভিযানে ‘জঙ্গি’ সন্দেহে আটক হয়েছেন শাপলা খাতুন। তার সঙ্গে রয়েছেন তার দুই শিশু সন্তানও। এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক শাপলা খাতুনের স্বামী মাহাতাব হোসেন।

মাহাতাব-শাপলা দম্পতির বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার লক্ষীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর কৈজুরী গ্রামে।

আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক ১০, বিস্ফোরক জব্দ

আরো পড়ুন:

শাপলা খাতুনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় হতবাক প্রতিবেশিরা। তবে, দুই বছর আগে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় পুলিশের হাতে আটকের অভিযোগ রয়েছে মাহাতাব হোসেনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি, মাহাতাবের গতিবিধির বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার লক্ষীপুর ইউনিয়ন এক সময় পরিচিত ছিল চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে। যেখানে প্রায়ই ঘটতো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে সেই পরিস্থিতি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে।

আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে কৈজুরী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মাহাতাবের বাবার নাম হাবিবুর মন্ডল। তিনি ভ্যানচালক। টিনসেড দুটি ঘর। দুটি ঘরই তালাবদ্ধ। সাত বছর আগে আতাইকুলার রঘুনাথপুর গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মজনু ব্যাপারীর মেয়ে শাপলা খাতুনকে বিয়ে করেন মাহাতাব। তাদের এক ছেলে হুজাইফার বয়স ৬ বছর আর এক মেয়ে জুবেদার বয়স দেড় বছর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহাতাব বড়। লেখাপড়া প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে পারেননি তিনি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশি কালু মন্ডল, শফিকুল ইসলাম, রেজাউল প্রামানিক, রিনা খাতুন, মুন্নী খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ভ্যান চালিয়ে ও কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন মাহাতাব। তার স্ত্রী বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। নামাজ কালাম পড়েন দুই জনই। কারো সঙ্গে কখনও উগ্র ব্যবহার করেননি তারা। তারা স্বামী-স্ত্রী কবে কিভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়েছেন তা কারোরই জানা নেই।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, মাহাতাবের স্ত্রী শাপলা মোটামুটি শিক্ষিত। তার শ্যালক মামুনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় পলাতক। শ্যালক মামুনের মাধ্যমে মাহাতাব ও তার স্ত্রী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হতে দেখা যায় মাহাতাবের বাবা হাবিবুর মন্ডলকে। কথা হলে তিনি বলেন, ‘একদিন সন্ধ্যায় দেখতে পাই বউ, বাচ্চা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে মাহাতাব। কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, তার ভায়রা আসছে মালয়েশিয়া থেকে। দেখা করতে যাচ্ছে। তারপর থেকে তাদের আর খোঁজ নেই। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও সন্ধান পাইনি তাদের। পরে শনিবার শুনলাম ছেলের বউ জঙ্গিতে ধরা পড়েছে। এখন আইনে যা হয় হোক।’

লক্ষীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জামাল প্রামানিক বলেন, মাহাতাব বছর দুয়েক আগে কক্সবাজারে জঙ্গি সন্দেহে আটকের অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে এলাকায় মাহাতাবের চলাফেরা ছিল সন্দেহজনক। বিষয়টি আতাইকুলা থানার ওসিকে জানানো হয়েছিল। নিখোঁজের পর তার বাবাকে নিয়ে থানায় গিয়ে ছবিসহ সব তথ্য দিয়ে আসা হয়েছে। এখন শুনি ছেলেটা ও তার বউ জঙ্গি হয়েছে। বিষয়টি লজ্জাজনক।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, মাহাতাবের বাবা আসছিল। ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না এজন্য। তারপর বলেছিল দুই বছর আগে একবার জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে তারা জামিন করায়ে নিয়ে আসছে। তবে নিখোঁজের বিষয়ে কোনো জিডি বা অভিযোগ কিছু দেননি।

স্থানীয় মেম্বার মাহাতাবের গতিবিধি সম্পর্কে আগেই পুলিশকে জানিয়েছিল, আপনারা নজরদারিতে রাখতে পারতেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি হাফিজুর বলেন, মেম্বার এ ধরনের কোনো তথ্য এর আগে দেননি। বিষয়টি আমার জানাও নেই। মেম্বার সত্যি কি মিথ্যা বলছে সেটি তার ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, নিখোঁজদের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্স নজরদারি করে। সারা দেশে যারা নিখোঁজ হয়, সেগুলো অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেখানে ডাটাবেইজ তৈরী হয়। অভিযানের বিষয়ে বা তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আমরাও তাদের সহযোগিতা করে থাকি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। তবে মাহাতাব দম্পতির তৎপরতা ও তার বাড়িতে কারা যাতায়াত করতো সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়