ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

অধ্যক্ষের ভুলে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত জান্নাত আক্তারের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৪ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১২:০৯, ১৪ আগস্ট ২০২৩
অধ্যক্ষের ভুলে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত জান্নাত আক্তারের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় প্রয়োজনীয় ফি সহ সবকিছু জমা দিয়েও এবারের আলিম (এএইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিতে পারছেন না একজন মাদ্রাসা ছাত্রী।অথচ পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে প্রতিকার চেয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন জান্নাত আক্তার নামের ঐ শিক্ষার্থী।

জান্নাত আক্তার উপজেলার আওয়ালিয়ানগর মােহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার আলিম শাখার ছাত্রী। 

তার বাবা মোশারফ হোসেন বিজয়নগরের পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের একজন চা বিক্রেতা। 


ইউএনওর কাছে দেওয়া ওই অভিযােগের অনুলিপি মাদ্রাসাবাের্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি), জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য আওয়ালিয়ানগর মােহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের ৩ হাজার টাকাও জমা দেয় ওই ছাত্রী। অধ্যক্ষ আবদুল হক ছাত্রী ও তার বাবার সামনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম পূরণের টাকা নিজের টেবিলের ড্রয়ারে রাখেন। 

ওই মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষার নিয়মিত ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে জান্নাত ছাড়া বাকী ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড সম্পন্ন হয়। অধ্যক্ষ মুঠোফোনে জান্নাতের বাবাকে বিষয়টি জানান। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার খবর পেয়ে গত ৮ আগস্ট বাবাকে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে জান্নাত।অধ্যক্ষ জানান, টাকা না দেওয়ায় ফরম পূরণ হয়নি। ফরম পূরণের টাকাসহ কাগজপত্র অধ্যক্ষের কাছে দিয়েছেন এবং তিনি (অধ্যক্ষ) সেই টাকা ড্রয়ারে রেখেছেন বলে জানায় জান্নাত। অধ্যক্ষ তখন তাদের সামনেই টেবিলের ড্রয়ার খুলে টাকাসহ কাগজপত্র দেখতে পান। অধ্যক্ষ নিজের ভুল স্বীকার করে পরের দিন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে ফরম পূরণ করে দিবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুর পর্যন্তও তার ফরম পূরণ হয়নি। এইচএসসি (আলমি) পরীক্ষা ১০দিন পিছিয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষকে ফরম পূরণ করে দিতে অনুরোধ করেন এই ছাত্রী। কিন্তু অধ্যক্ষ কিছুইতে আর ফরম পূরণ সম্ভব না এবং সময় শেষ বলে জান্নাতকে জানান।

মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল হাই বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রেখে ভুলে গেছেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছেন। মেয়েটা কি পরীক্ষা দিতে পারবে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছে এই বছর জান্নাত পরিক্ষা দিতে পারবে না।
  
জান্নাত আক্তার বলেন, হুজুর (অধ্যক্ষ) ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি। আমার বাবা ও আমি অনেক আকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু তাদের মন গলেনি। তাই সহায়তা চেয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত দিয়েছি। 

জান্নাত বলেন, আমি পরীক্ষা দিতে চাই। আমি যথাসময়ে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু হুজুরের (অধ্যক্ষ) ভুলের জন্য কি আমি পরীক্ষা দিতে পাররো না। আমার দোষ কোথায়? কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি কেন ভুগবো। 

জান্নাতের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, আমি চা বিক্রি করে মেয়েটাকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছি। গরীব বলে কি কোনো বিচার পাবো না।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হক আজাদ বলেন, বাের্ডে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি ফরম পূরণ হয়ে যাবে। সোমবার বোর্ডে যাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল তো মানুষের হতেই পারে। ফরম পূরণের জন্য চেষ্টা করতেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিল বলেন, ফরম পূরণসহ প্রবেশপত্রের জন্য মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখান থেকে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করছি এই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী যেন পরীক্ষা দিতে পারে এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, মেয়েটাকে কাল (সোমবার) মেয়ের গার্ডিয়ানের সাথে দিয়ে জেলা শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কাছে পাঠান। আমি এখনই শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি যেন গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

রুবেল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়