ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বৃষ্টিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেহালদশা

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৪ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৫:৩৮, ১৪ আগস্ট ২০২৩
বৃষ্টিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেহালদশা

বৃষ্টিতে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেহালদশা। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে খানাখন্দ সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আংশকা করছেন যাত্রী ও চালকরা। ওই মহাসড়কের ৮৫ কিলোমিটারের পুরো অংশের বেশ কিছু অংশ জুড়েই ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। 

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে ওই সড়কের চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রী সাধারণের।  

গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এই মহাসড়কের দুটি অংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। 

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষের ছোট ছোট খানাখন্দ বন্ধে কাজ করছে এবং বৃষ্টি কমে গেলে খানাখন্দ হওয়া পুরো অংশ জুড়েই বিটুমিন দিয়ে পুরোদমে মেরামত করার আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাদ্দাম হোসেন। 

অন্যদিকে, গাজীপুর সড়ক বিভাগের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এমনকি গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকার ফোন দিয়ে এবং অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান সড়কের মধ্যে খানাখন্দ তৈরির বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে পোড়াবাড়ির আগ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়কে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। রাজেন্দ্রপুর থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখী হোতাপাড়া, ভবানীপুর, মেম্বারবাড়ি, বাঘের বাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, রঙ্গিলা বাজার, এমসি বাজার, নয়নপুর, জৈনা বাজার, স্কয়ার মাস্টারবাড়ি, সীড স্টোর, হাজীর বাজার, ভালুকা, ভরাডোবা এলাকায় মহাসড়কে খানাখন্দের তৈরি হয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুর অংশে এমসি বাজার এলাকায় তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এসব খানাখন্দ তৈরির অন্যতম কারণ হচ্ছে বৃষ্টির পানি মহাসড়কে জমে থাকা এবং ওই পানি নিষ্কাশনের কোন পথ না থাকা। এসব খানাখন্দের কারণে কম গতি নিয়ে গাড়ী চলার কারণে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহনে যেমন সময় বেশি লাগছে তেমনি মহাসড়কে ধীর গতি হয়ে কোথাও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজার এলাকার বাসিন্দা ফাইয়াদ হাসান বলেন, প্রথম এই খানাখন্দগুলো ছোট আকারে ছিলো। বৃষ্টি শুরুর পর থেকে খানাখন্দগুলো বড় হতে থাকে।এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তা দ্রুত সংস্কার করা না হলে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

একই উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়কের উত্তর পাশে কথা হয় ময়মনসিংহ থেকে আসা বাসযাত্রী ফারজানা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাওনা থেকে ময়মনসিংহ ৬১ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে আগে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগতো। আর খানাখন্দের কারণে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার মতো।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার চলাচল করে আলম এশিয়া পরিবহন। ওই বাসের চালক লিয়াকত হোসেন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু জায়গায় ভাঙ্গাচোরা ছিল। বৃষ্টির সাথে সাথে খানাখন্দ বাড়তে থাকে, এখন কিছু খানাখন্দ বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। দ্রুত মহাসড়কের খানাখন্দ সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা এনা পরিবহনের চালক রতন মিয়া জানান, সড়কের খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। খানাখন্দ থেকে বাঁচতে মুহূর্তেই লেন পরিবর্তন করছে ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেল। এতে যেকোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি।

মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশে ভালুকা মডেল থানার সামনে একটি বালু ভর্তি ট্রাকের পাতি ভেঙে বিকল হয়ে পড়েছে। গাড়ির চালক রফিকুল  ইসলাম জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে ত্রিশালের বালিপাড়া থেকে রওনা হয়েছিলেন। এ পথটুকু আসতে তার আঞ্চলিক সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়েছে। পুরো সড়ক জুড়েই খানাখন্দ। কিছু জায়গা ছোট বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় ভালুকা থানার সামনে আসতেই তার ট্রাকের পেছনের দুই চাকার পাতি ভেঙে বিকল হয়ে গেছে। এই বৃষ্টির মধ্যে কোথাও ঘুরে মেরামতের মিস্ত্রি না পেয়ে অসহায়ের মতো বসে আছি।

উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তরের জেলাগুলোর সাথে সহজ দ্রুত সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য বর্তমান সরকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করে ২০১৬ সালে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়