ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

স্বামীর হাত ধরে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’য় নাম লেখান সানজিদা

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৯, ১৫ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৭:২১, ১৫ আগস্ট ২০২৩
স্বামীর হাত ধরে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’য় নাম লেখান সানজিদা

২০১৬ সালে জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুমন

মৌলভীবাজারে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে সম্প্রতি আটক হওয়াদের মধ্যে একজন সানজিদা (১৮)। তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিজ বলাইল গ্রামের রাসেদুর রহমান রাসেল ওরফে জঙ্গি সুমনের স্ত্রী। সানজিদার এটি প্রথম বিয়ে হলেও সুমনের দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে সুমন ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকার বাঁশপট্টি মাঠ থেকে জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার হন। বিয়ের পর সুমনের সংস্পর্শে এসে সানজিদা জঙ্গি হয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সানজিদার সৎ বাবা ও শ্বশুর এবং জঙ্গি সুমনের বাবা লতিফ সরদারের জন্মস্থান হাটশেরপুর ইউনিয়নে শেরপুর গ্রামে। তবে যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পরে ইউনিয়নের বলাইল গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে বাড়ি করে সেখান বসবাস করছিলেন সুমনের পরিবার। বর্তমানে সুমনের বাবা বগুড়ার সাবগ্রাম ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলায় একটি ইট ভাটায় কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি বিয়ের ঘটকেরও কাজ করেন। 

আরও পড়ুন: ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে উধাও হন মাহাতাব-শাপলা দম্পতি

আরো পড়ুন:

সুমনের বাবা লতিফ সরদারের ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে রাসেদুর রহমান রাসেল ওরফে সুমন। সুমনের জন্ম ১৯৯২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। লতিফের ছোট ছেলে রাসেল মিয়া (২৫)। তিনি এখন বাড়িতেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লতিফ সরদারের বড় মেয়ে মিতা আক্তারের নারচী গোদাগাড়ী গ্রামে বিয়ে হয়েছে। তার স্বামী আনছার বাহিনীতে চাকরি করেন। 

লতিফের বড় ছেলে সুমন শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বয়রা কারিগরি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করার পর সুমন চাকরির জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি তার ফুফুদের বাসায় থাকতেন। সুমন ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকার বাঁশপট্টি খোলামাঠ থেকে গ্রেপ্তার হন জঙ্গি হিসেবে। সেদিন সব মিলিয়ে ৮ জন জঙ্গি সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছিল। জেলে থাকাকালীন জঙ্গি সুমনের সঙ্গে থাকা অন্য সহচররা সুমনের বউকে জেলখানায় সুমনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে এসে হত্যা করে। তার বউয়ের কাছে জঙ্গিদের তথ্য আছে বলে বউকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর সুমন জামিনে মুক্ত হন। এরপর তিনি নিজ বাড়ি নিজবলাইল চলে আসেন। বাড়িতে কয়েকদিন থাকার পর সুমন নওগাঁর বদলগাছি এলাকায় একটি ইটভাটায় কাজে যোগ দেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেন। 

পাঁচ বছর আগে সুমনের মা রাসেদা বেগম সাপের কামড়ে মারা যান। ৬ মাস পর সুমনের বাবা লতিফ সরদার তার বিধবা মামাতো বোন আঞ্জুয়ারাকে বিয়ে করেন। আঞ্জুয়ারার আগের পক্ষের দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে সানজিদা বড় এবং সাজু (৮) ছোট। সাজু এখন বগুড়া একটি হোটেলে কাজ করেন।

সানজিদা বগুড়া বিসিক এলাকার শিশু পরিবারে থাকতেন। সেখান থেকেই তিনি এসএসসি পাস করেছেন। সুমন জেল থেকে বাড়িতে এলে সানজিদার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকেই সৎ ভাই-বোনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সানজিদা নিজবলাইল তাদের নিজের বাড়িতেই থাকতেন। আর সুমন ইটভাটায় কাজ করতেন এবং বাড়িতে যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গত ১১ দিন আগে সুমন সানজিদাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। এরপর গত শনিবার মৌলভীবাজার থেকে জঙ্গি হিসেবে সানজিদা গ্রেপ্তার হন।

গ্রেপ্তার সানজিদার সৎ বাবা এবং বর্তমান শ্বশুর লতিফ সরদার বলেন, ‌‌‘সুমন এখন কোথায় আছে তা আমরা জানি না। আগে থেকেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ। সানজিদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নওগাঁর ইটভাটায় আমি খোঁজ নিয়েছি। তারা বলেছেন, সুমন কয়েকদিন আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’

সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‌সানজিদার স্বামী সুমন জঙ্গি হিসেবে ২০১৬ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার পরিবার জানিয়েছে সুমন ৬ বছর জেলে ছিলেন। জেলে থাকাকালীন সুমনের প্রথম বউ হত্যার শিকার হন। পরে জেল থেকে জামিনে মুক্তি নিয়ে নওগাঁয় একটি ইট ভাটাতে চাকরি করেন। এর মধ্যে সানজিদার সঙ্গে সুমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ‍সুমন নওগাঁ থেকে সারিয়াকান্দিতে যাতায়াত করতেন। সম্প্রতি সানজিদাকে সুমন নওগাঁ নিয়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে সুমনই নতুন যে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য করে নেন সানজিদাকে। 

সানজিদাদের প্রভাব এলাকায় পড়েছে কিনা বা তারা সংগঠনের অন্য কাউকে জড়ানোর চেষ্টা করেছে কিনা জানতে চাইলে ওসি রাজেশ বলেন, ‌না এরকম কোনো তথ্য আমরা এখনও পাইনি। তবে আমরা তদন্ত করছি এবং ওই পরিবারের সব সদস্যের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। 

পরিবারের সদস্যদের কেউ যেন সানজিদাদের পথ অনুসরণ না করে এজন্য কাউন্সিলিং করা হয়েছে কিনা বা করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু পরামর্শ দেওয়া দরকার আমরা দিচ্ছি। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদেরকেও বিষয়টি অবগত করা আছে। তারাও তাদেরকে বিষয়টি নিয়ে সুপরামর্শ দেবেন।  

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়