ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

রেললাইনের পাশে আমেনার সংগ্রামী জীবন

সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৮ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ০৮:৫২, ১৮ আগস্ট ২০২৩
রেললাইনের পাশে আমেনার সংগ্রামী জীবন

রেললাইনের পাশের সরকারি জায়গায় এই ঘরটি ছাড়া কিছু নেই আমেনা বেগমের

‘ট্রেন আসলে ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে যাই। মনে হয়, এই বুঝি ঘর ভেঙে পড়ে মাথার ওপর। রেললাইনের পাশের সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘরটি ছাড়া আর কিছু নেই আমার। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই।’

কথাগুলো বলেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী এলাকার আমেনা বেগম। তার বয়স ৫০ বছর। তিন যুগের বেশি সময় ধরে রেল লাইনে পাশে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন আমেনা বেগম। সরকার কিংবা সামর্থবানদের সহযোগিতার পাওয়ার আকুতি নিয়ে দিন কাটছে ভূমিহীন এই নারীর।  

তিনি বলেন, ২০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমি এখন নিঃস্ব। আমি জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। মেম্বার-চেয়ারম্যানের হাতে-পায়ে ধরে একটা ভাতা কার্ড পেয়েছি। ভাতার ১ হাজার ৫০০ টাকায় আমার ওষুধ হয় না। আমি অসুস্থ হওয়ায় উপার্জন করতে পারি না। বেশিরভাগ সময় পাশের মিজান ভাইয়ের ‘খাবার বাড়ি’ থেকে এক-দুই বেলা খাবার খেয়ে থাকি। 

আমেনা বেগম বলেন, ‘শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছেন। আমিও তো ভূমিহীন। আমি কেন পেলাম না? আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তো আমার নাম লিস্ট করল না। তাহলে কি আমি ঘর পাবো না?’

আমেনা বেগম বলেন, আমার একটা মাথা গোঁজার জায়গা প্রয়োজন। এ নড়বড়ে জোড়াতালি দেওয়া ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। যদি কেউ আমাকে একটা ঘর দিতো আর চিকিৎসার জন্য একটু সহোযোগিতা করত, তাহলে আমি হয়ত একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।

আমেনা বেগমের প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমেনা বেগম জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি রেললাইনের পাশে যে জায়গায় বসবাস করেন, সেখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় তার প্রাণহানি হতে পারে। আমার অনুরোধ, স্থানীয় প্রশাসন, বিত্তশালী ব্যক্তিরা যেন আমেনা বেগমের পাশে দাঁড়ান এবং তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন।’

এ বিষয়ে শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমেনা বেগমকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার সময় তাকে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু, তিনি এই এলাকা ছেড়ে যাবেন না বলে আবেদন করেননি। এখন আর সুযোগ নেই। তবে, আমরা তার খেয়াল রাখি। যদি কোনো বিত্তশালী মানুষ তাকে একটু আর্থিক সহযোগিতা করেন, তাহলে তার জন্য একটি ভালো ঘর করে দেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়