ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

ফুলবাড়ীতে খেজুর চাষে সফল জাকির

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৮ আগস্ট ২০২৩  
ফুলবাড়ীতে খেজুর চাষে সফল জাকির

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জাকির হোসেনের খেজুরবাগান

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছয় প্রজাতির সৌদি খেজুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন জাকির হোসেন। ২০ শতক জমিতে তার খেজুরবাগান। ফলন হয়েছে ভালো। মরুভূমির খেজুরের মতো স্বাদও পাওয়া যায় এই খেজুরে। জাকিরের খেজুরবাগান দেখতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 

ফুলবাড়ী-সৈয়দপুর সড়কের পাশে স্বজনপুকুর এলাকায় জাকিরের খেজুরবাগান। সেখানে আছে মরিয়ম, আজওয়া, খলিজি, মেডজুল, বাহির ও আম্বার জাতের গাছ। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত হলুদ, লাল ও সবুজ রঙের ফল ধরেছে। আরও ২ একর জমিতে ৩০০টি খেজুরগাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন জাকির।

জাকির হোসেন ১৯৯৯ সালে কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে যান। সেখানে তিনি প্রায় ১৮ বছর মেকানিকের দোকানে কাজ করেন। সে দেশে এসব জাতের খেজুরের বাগান দেখে উৎসাহিত হন জাকির। ২০১৭ সালে তিনি ১২ কেজি পাকা খেজুর দেশে আনেন। সেই খেজুর থেকে চারা তৈরিতে সফল হন জাকির। প্রথমে ১৯টি চারা তৈরি করে তার পরিচর্যা করেন। চার বছর ধরে গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার পর তিনটি গাছে প্রথমবারের মতো ফল আসে। পরের বছর আরও নয়টি গাছে ফল আসে। প্রথম তিনটি গাছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে খেজুর ধরেছিল। পরে নয়টি গাছে গড়ে ৭০-৮০ কেজি করে খেজুর ধরে। কোনো কোনো গাছে ১০০ কেজির বেশি ফলও ধরেছে।

জাকির হোসেনের খেজুনবাগান দেখতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের সুমিষ্ট খেজুর চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। আমি জাকির ভাইয়ের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করব। ইচ্ছে আছে, খেজুর চাষ করে স্বাবলম্বী হবো।

অন্য এলাকা থেকে আসা রোমিজ উদ্দিনসহ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, সৌদি আরবের খেজুর বাজার থেকে অনেক কিনে খেয়েছি। আজ দেশের মাটিতে উৎপাদিত সৌদি খেজুর খেলাম। স্বাদে পার্থক্য নেই এবং দেখতেও একই রকম।

বাগানশ্রমিক জামিল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, এই বাগান তৈরির শুরু থেকে আমি এর সব কাজ করছি। এবার অনেক খেজুর ধরেছে। এসব খেজুর সুস্বাদু। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন এই বাগান দেখতে। 

বাগানমালিক জাকির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলাম। সেই দেশে সৌদি আরবের সুমিষ্ট খেজুর চাষ করতে দেখেছি। অনেক বাগান আছে। তখন চিন্তা করি, কেন আমার দেশে এই খেজুর হবে না? দেশে ফিরে পরিত্যক্ত ২০ শতক জমিতে চারা তৈরি করে আবাদ শুরু করি৷ ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি, আমি খেজুরের চারা তৈরি করছি। আমার ইচ্ছে আছে, খেজুরের আরও বড় বাগান করব।

তিনি আরও বলেন, এবার বাগানে প্রচুর খেজুর ধরেছে। এসব খেজুর বাজারজাত করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু, আমি তা করছি না। বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ২-৩টা করে খেজুর খেতে দিচ্ছি। তবে, প্রতিটি চারা ১০০০ টাকা করে বিক্রি করছি। আমি আশাবাদী, এসব চারা লাগিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

কৃষি অধিদপ্তরের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রথমবারের মতো একজন সৌদি আরবের সুমিষ্ট খেজুর চাষ করছেন। এটা এলাকাবাসীর জন্য গৌরব। এই জেলা ধান ও লিচুর জন্য বিখ্যাত। আশা করছি, খেজুরের জন্যও বিখ্যাত হবে। উপজেলা কৃষি অফিসাররা নিয়মিত ওই খেজুরের বাগান পরিদর্শন করে সুপরামর্শ দিচ্ছেন।

মোসলেম/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়