ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বিচারক এজলাসে লিখলেন

হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২১ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৩:০১, ২১ আগস্ট ২০২৩
হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন

বিচারক তার এজলাসে বিচার প্রার্থীদের জন্য লিখেছেন- হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন। একই সঙ্গে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না। 

বিচারকের এই লেখা বিচার প্রার্থী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। 

মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান গত বুধবার (১৬ আগস্ট) এ কথাগুলো লিখে তার সেরেস্তায় লাগিয়ে দেন। পরদিন তা মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও আদালতে আসা বিচারপ্রাথীদের দৃষ্টিগোচর হলে এ কথাগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। 

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার এই লেখা বিভিন্ন মানুষ ছড়িয়ে দিলে ওই বিচারককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্যালুট জানানো হচ্ছে, বাহবা দেওয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তার ফেসবুকে পেইজে লিখেন, “আজ মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ইফতি হাসান ইমরান -এর আদালতে দুটি লেখা চোখে পড়লো। তাঁর এজলাসের সামনে লেখা-‘অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না।’ আর বিবাদী বা আসামির ডকে লেখা ‘হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না। স্বাভাবিক থাকুন।’ তার এ উন্নত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। আড়াই শত বছরের বৃটিশ উপনিবেশিক সামন্তবাদী প্রথা তিনি তার আদালতে ভেঙে দিলেন।”

ফেসবুকের এই পোস্টের কমেন্টে বিচারকের এই যুগান্তকারী লিখাকে প্রায় সকলেই স্যালুট জানিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্যরাও বিচারকের এই লিখাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট কাজী নজরুল ইসলাম অসীম বলেন, বিচারকের এমন মহতি লিখাটি আমার ভালো লেগেছে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।

মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জাকারিয়া মোল্লা বলেন, বিচারক যে কথাগুলো আদালতে লিখেছেন কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকের এই মহতি কথাগুলোতে আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার দৃষ্টিকোন থেকে মনে হয়েছে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় যে উক্তিটি এখানে লিখেছেন, সেটা একটা বিচার প্রাথীর জন্য ইতিবাচক। তাছাড়া বিচার প্রার্থীরা সাধারণত আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে, সেই প্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে সে এই লিখাটি যখন দেখবে তখন তার দৃষ্টিকোন থেকে বিচারকদের প্রতি সন্মান আরো বাড়বে। এতে জনগণ বিচারকদের কাছ থেকে আশনরুপ সেবা পাবার আশা করবে। তদ্রুপ আমরা যারা বিজ্ঞ আদালতকে সহয়তা করে থাকি আমাদের কাছেও এ শব্দগুলো ইতিবাচক মনে হবে। জনসাধারণের জন্য একটি ভালো লক্ষণ বলে আমি মনে করি।  

এ ব্যাপারে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সুমন ভূইয়া বলেন, স্যার ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না, কেউ হাত জোড় করে দাড়ালে তিনি হাত নামিয়ে দেন। তিনি বলেন, একজন বিচার প্রার্থী আমার কাছে আসছে বিচারের জন্য সে মাথা নত করে রাখবে কেন।  আমিতো আল্লাহ পাক বা খোদা না। আদালতের কাছে সে বিচার চাইতে আসছে। 

তিনি আরো বলেন, এই বিষয়গুলো স্যারের ভালো লাগেনা। এজন্য স্যার তার এই বক্তব্য লিখে দিয়েছে আমি এবং স্যার মিলে সেরেস্তায় লাগিয়ে দিয়েছি।

রতন/টিপু 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়