সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত রাজশাহী যুবলীগ
শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চুর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। তারা নিজ নিজ পদে আছেন প্রায় দেড় যুগ ধরে। জেলার সভাপতি আবু সালেহও দায়িত্বে আছেন দেড় যুগের বেশি সময়। জেলার সাধারণ সম্পাদক এইচএম খালিদ ওয়াসি কেটুর মৃত্যুর পর চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আলী আযম সেন্টু। তারাও আর বয়সে যুবক নন।
দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের দায়িত্বে থাকা এই নেতারা আর যুবলীগের পদে থাকছেন না। আগামী ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৭ বছর পর ২ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবলীগের এবং ৩ সেপ্টেম্বর জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকরা। এবার পদ পেতে তৎপর তরুণ নেতারা।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে এবার প্রার্থী হননি দুই মেয়াদে ১৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চু।
সবশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ নগর যুবলীগের সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো রমজান আলী সভাপতি ও মোশারফ হোসেন বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও তারা সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর আর নেতৃত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। তাই এবার আর তারা এসব পদে প্রার্থী হননি।
মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘আমরা তো অনেক দিন দায়িত্ব পালন করলাম। যুবলীগ ছেড়ে এবার মূলদলে যাওয়া দরকার। নতুনরা যুবলীগের নেতৃত্বে আসবে।’
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে যারা সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করছেন তারাই যুবলীগের নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসতে পারেন। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমিদখল, মাদকসেবী বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে এবার নেতৃত্বে আনা হবে না। এক্ষেত্রে নগর যুবলীগের সভাপতি পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনির। আর সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন যুবলীগের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান।
মহানগর যুবলীগের সহ-সম্পাদক ববিন খান বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন, এর আগে দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হচ্ছে। এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নেতাকর্মীরাও খুব উজ্জীবিত। দীর্ঘদিন পর যুবলীগের পালে হাওয়া লেগেছে। এই সম্মেলনে আমি সভাপতি পদে তৌরিদ আল মাসুদ রনি আর সাধারণ সম্পাদক পদে নাহিদ আক্তার নাহান ভাইকে দেখতে চাই। তারা সুখে-দুঃখে সব-সময় নেতাকর্মীদের পাশে থাকেন।’
এদিকে রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি হন আবু সালেহ। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এরপর তিনিও ১৯ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে আবু সালেহর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন খালিদ ওয়াসি টিটু। কিছুদিন পর টিটু মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম সেন্টু। তবে দুজনের বিরোধের কারণে সংগঠনে স্থবিরতা লম্বা সময় ধরেই। অবশেষে সম্মেলনের দিন ঠিক হওয়ায় উজ্জীবিত জেলার নেতারাও।
জেলা কমিটির জন্যও সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে গঠনতন্ত্র মেনে এবার প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত দেননি সভাপতি সালেহ।
জেলায় সভাপতি পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল, মোজাহিদ হোসেন মানিক, আলমগীর মুর্শেদ রঞ্জু, আনোয়ার হোসেন, তাসিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম রাজা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন, পবা উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হক, রেজাউন নবী আল মামুন। আর সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন, সামাউন ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু প্রমুখ। জেলা কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসতে পারেন সে ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
যুবলীগের এই সম্মেলন নিয়ে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) জেলা ও মহানগরের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এ সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা। সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান সবার সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে দলে আছেন এবং দলের জন্য অবদান আছে এই দুই মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে তিনি নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। তারপরও যদি সমঝোতা না হয় সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের ভোটাভুটি হবে। দুই কমিটিতে যোগ্যরাই নেতৃত্বে আসবেন।’
মাসুদ