ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

লাগামহীন আলুর বাজার, বিপাকে ক্রেতারা

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২২ আগস্ট ২০২৩  
লাগামহীন আলুর বাজার, বিপাকে ক্রেতারা

আলু উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা রংপুর। চলতি বছরে এ জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন। জেলায় সারা বছরের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায উৎপাদন বেশি হওয়ার পরও রংপুরের বাজারে দিন দিন বাড়ছে আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের আলুর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আলুর অতিরিক্ত দামে বেকায়দায় পড়েছে ক্রেতারা। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে আলুর দাম।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খেত থেকে আলু তোলার পর রংপুর অঞ্চলের ৭০টি হিমাগারে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত আছে বলে আমরা পরিসংখ্যান পাই। এর মধ্যে কিছু আলু বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে এই অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে আলুর মজুত পেয়েছি প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। যা এই অঞ্চলে স্থানীয় চাহিদার দ্বিগুণ। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে প্রতিবছর ৭৮ লাখ টন আলুর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১ কোটি ১০-১৫ লাখ মেট্রিক টন।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রংপুর সিটিবাজার, লালবাগ সবজি বাজার, মর্ডান, মাহিগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কার্ডিনাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজিতে। গ্রানুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিল বিলাতি আলু ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজার পর্যালচনায় দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের আলুর দাম দেড় থেকে দুই টাকা বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। 

বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে দাম বেশি হওয়ায় এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আলু কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সিটি বাজারে বাজার করতে আসা ফার্মেসি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই স্বাভাবিক থাকছে না। আলুর ভরা মৌসুমে পত্র-পত্রিকায় দেখি কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার কিছুদিন পর সেই আলুর দাম বাজারে অস্বাভাবিক। গত এক মাস ধরে আলুর দাম দিন দিন বাড়ছে। আজও গত সপ্তাহের চেয়ে ৬-৭ টাকা বেশি দিয়ে ৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হলো আলু। তরকারিতে আলুর বিকল্প নেই তাই কম করে কিনতে হলো।’

সিটি বাজারে আলমগীর নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আলুর দাম গত দুই থেকে তিন মাস আগে থেকেই বাড়তি। সেটি ধিরে ধিরে ২-১ টাকা করে আরও বাড়ছে। ৩৫ টাকা কেজি গ্রানুলা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা কেজি শীল আলু বিক্রি হচ্ছে এখন খুচরা বাজারে। আলুর জাত এবং সাইজ ভেদে এই দাম।’ 

আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখীর বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে আমাদের এখানে কেনার চেয়ে আনেক বাড়তি দামে আলু বিক্রি করি না। কেনার দামের সঙ্গে খরচ মিলিয়ে ২-১ টাকা কেজিতে লাভ ধরে আমরা এই খাদ্যপণ্যটি বিক্রি করছি।’

হিমাগারগুতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত আলু মজুত থাকলেও চাহিদার থেকে কম আলু বের করছেন ব্যবসায়ীরা। হিমাগারগুলোতে ব্যবসা করা পাইকাররা বলছেন, বড় বড় মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক লাভের আশায় আলুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। 

রংপুরের একটি কোল্ড স্টোরেজে ব্যবসা করা রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘আলুর দাম বাড়তি আমরাও বুঝতেছি কিন্তু করার কিছুই নেই। স্টোরেজে কৃষকদের চেয়ে এখন বড় ব্যবসায়ীদের আলুর পরিমাণ অনেক বেশি। কৃষকরা আলু বিক্রি করলেও অধিকাংশ মজুতদার ব্যবসায়ীরা আলু ছাড়ছেন না। ফলে দাম বাড়তি। আমরা যতটুকু পারছি হিমাগার থেকে আলু কিনে বাজারে ছোট পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি। পাইকারি পর্যায়ে ৩১-৩২ টাকা কেজিতে এখন আলু কেনা বেচা হচ্ছে।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু মজুত আছে তা স্থানীয় চাহিদার দ্বিগুণ। উদ্বৃত আলু দিয়ে অন্য অঞ্চলেরও চাহিদা পূরণ সম্ভব। গত সপ্তাহেও আমাদের এই অঞ্চলের হিমাগরগুলোর আলুর মজুত পেয়েছি প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। মজুত অনুযায়ী বাজারে আলুর সংকট হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়