ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

জৈব সার তৈরি করে স্বাবলম্বী রুহুল আমিন 

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৩ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১০:০২, ২৩ আগস্ট ২০২৩
জৈব সার তৈরি করে স্বাবলম্বী রুহুল আমিন 

২০১৪ সালে নিজ গ্রামে পরীক্ষা মূলকভাবে ছোট পরিসরে জৈব সার তৈরি শুরু করেন গাজীপুরের রুহুল আমিন। পরবর্তীতে দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেন জৈব সার কারখানা। স্বাবলম্বী হয়েছেন নিজে এবং ১৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তার কারখানায়। 

রুহুল আমিনের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার আজুগীরচালা গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুর (বারি) এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জৈব কৃষি গবেষক ড. নাজিম উদ্দিনের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৭ সালে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙা এলাকায় বড় আকারে গড়ে তোলেন জৈব সার কারখানা।

এর আগে তিনি বারিতে একাধিকবার উচ্চমানের জৈব সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকে শুরু হয় রুহুল আমিনের সাফল্যের গল্প। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে উদ্যোক্তা রুহুল আমিনের জৈব সার কারখানায় ১৫ জন শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছেন। এখানে কাজ করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। শ্রমিকদের ভেতরে কয়েকজন নারীও রয়েছেন।

জৈব সার তৈরি করে রুহুল আমিন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও এলাকায় সুনাম অর্জন করেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছেন এগ্রোটেক অর্গানিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের জৈব সার কারখানা।  

২০২২ সালে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন জৈব সার উৎপাদন হয়েছে রুহুল আমিনের কারখানায়। ওই বছর প্রতি কেজি সার পাইকারি দরে ৬-৭ টাকা করে বিক্রি করে  প্রায় ৫০ লাখ টাকার জৈব সার বিক্রি করেন। চলতি বছরে পাইকারি দরে প্রতি কেজি সার ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন । সে হিসাবে তিনি এ বছর ৭০/৮০ লাখ টাকার সার বিক্রির আশা করছেন। এই সারের রয়েছে ভালো চাহিদা। তার কারখানা থেকে সার যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, রংপুর, বগুড়া, ঠাঁকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, মাগুরা, খুলনা, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। 

জানা গেছে, জৈব সার উৎপাদনে অন্যান্য যে কাঁচামাল এর মধ্যে ট্রাইকো ডার্মা, এবং গাজীপুর বারি ইমু-১ ও ২ সমৃদ্ধ, গোবর, মুরগির বিষ্টা, আখের গাদ, ছাই, চিটাগুড়, কাঠের গুঁড়া, সবজির উচ্ছিষ্ট, হাড়ের গুঁড়া, শিং কুচিসহ এসব কাঁচামাল একত্র করে পর্যায়ক্রমে সেডে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে উৎকৃষ্টমানের জৈব সার বানানো হয়।

উদ্যোক্তা রুহুল আমিন জানান, সরকারি-বেসরকারিভাবে যদি কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করে, সার ব্যবসায়ীদের জৈব সার বিক্রির জন্য রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয় এবং জৈব সারের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে কৃষক এই সার ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, জৈব সারে রয়েছে নানান উপকারিতা। ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়, সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটির গঠন ও প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ায়। জৈব সার ব্যবহারের ফলে আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমানো যায়, রাসায়নিক সারে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

রফিক সরকার/ইভা 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়