নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছে হেফাজত
মো. রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে আলোচিত ধর্মীয় সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’। প্রয়াত আল্লামা শফীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে এই সংগঠনের জন্ম বা উৎপত্তি হলেও কওমি মাদ্রাসাগুলোর মাধ্যমে সারাদেশে এই সংগঠনের রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। রয়েছে হাজারো নেতাকর্মী।
সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নিজেদের অবস্থানের কথা বারবার জানান দিলেও, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটি পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেক হেফাজত নেতা আভাস দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হেফাজতের কারাবন্দি নেতাদেরও বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত করে শিগগিরই পুনর্গঠিত কমিটি ঘোষিত হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে চলতি মাসের ৫ আগস্ট ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সবাইকে নতুন করে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া, কারাবন্দি নেতা মামুনুল হকসহ অন্যান্যদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে পদায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে চলতি মাসের মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের পুনর্গঠিত কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে সংগঠনের একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্প্রতি কারামুক্ত নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, হেফাজতে ইসলাম আগের জৌলসপূর্ণ যৌবনে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। দেশের তৌহিদী জনতা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হেফাজতকে যেভাবে দেখতে চায়, নতুন নেতৃত্ব ঠিক সেভাবেই কাজ করবে।
এদিকে, ২০২১ সালে বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও পুনর্গঠনে কারাবন্দি নেতারা কোনও পদ-পদবি পাবেন কি না, সেটা নিয়ে দলটির মধ্যেই দুটি পক্ষ রয়েছে বলে জানা গেছে। এক পক্ষের মত, মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্যান্য কারাবন্দি সিনিয়র নেতাদের পদ দিয়ে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা। অপর পক্ষের মত, প্রশাসনিক চাপ বা জটিলতা এড়াতে শুধুমাত্র যেসব নেতা জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছেন, তাদেরই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা। তবে শেষ পর্যন্ত কমিটির বিভিন্ন পদে কারা জায়গা পাবেন বা বাদ পড়বেন, সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
কমিটি পুনর্গঠন বিষয়ে দলটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। আমাদের কোনও রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। রাজনৈতিকভাবে আমাদের যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।
কমিটির পুনর্গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগঠনকে নতুন করে গোছানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে বর্তমান কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারা পদ-পদবি পাবেন, তা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে, চলতি মাসের মধ্যেই যে কোনও দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকেই হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও হেফাজত নেতা ও বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি জানান, শিগগিরই কমিটি ঘোষিত হবে। এ ব্যাপারে উপ-কমিটি কাজ করছে।
ফয়েজি বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কোনও রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবেও হেফাজত ব্যবহৃত হবে না। অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে নিজেদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সংগঠন ইসলাম, দেশ ও জাতির পক্ষে কথা বলবে।
টিপু/এনএইচ