ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর, আজও অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২৫ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৩:০৭, ২৫ আগস্ট ২০২৩
রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর, আজও অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে পড়ে হঠাৎ করেই ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছিলো। সেদিনটি ছিলো ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট।

বাংলাদেশে সেই রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। 

কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে সরকারের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। 

কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে সন্ত্রাস দমনের নামে সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর জাতিগত নিধন চালালে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল নামে। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তিতে কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।

রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদের নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে।

কুতুপালং ক্যাম্পের রাবেয়া খাতুন জানান, ‘মিয়ানমারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশে পালিয়ে এলাম। কিন্তু এখানে আমাদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন। রাতদিন তাদের গুলির আওয়াজ আমাদের আতংকে রাখে। আমার সন্তানরা বড় হচ্ছে তাদের নিয়ে ভয়ে আছি।’

কুতুপালং ওয়েস্ট ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বার বার দাবি তুলে আসছি আমাদের দাবি পূরণ করলে স্বদেশ মিয়ানমার ফিরে যাবো। নাগরিকত্বসহ ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে দিলে চলে যাবো নিজের দেশে।’

ক্যাম্পের মাঝিসহ একাধিক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও চলছে রোহিঙ্গা গনহত্যার বিচার। তার উপর মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তবে তাদের জতিগত পরিচয় ও অধিকার ফিরিয়ে দিলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে। তারা চায় সেখানে নিজেদের ভিটে মাটি। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইন পরিদর্শনও করেছেন। 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সবসময় প্রস্তুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজেদের ভিটে বাড়িতে যেতে চায়। তাদের নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের দাবিও রয়েছে। তারা কোনো মতেই রাখাইনে নির্মিত মডেল ভিলেজে যাবেনা। তিনি জানান সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে নিজেদের ভিটে বাড়িতে প্রত্যাবাসনের জন্য সম্মতি দিয়েছে। 

উখিয়া ও টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, রোহিঙ্গারা খুন খারাবি মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। 

তাদের মতে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে এখানে পরিবেশগত সমস্যা হচ্ছে। পাহাড় উজাড় হচ্ছে। দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা। রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের কারণে বাংলাদেশের নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এখানে একটি সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশংকা রয়েছে। 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে,  বিগত ৬ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ গোলাগুলিতে দু'শর বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এসময় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে ১৩১টি, মানব পাচারের মামলা হয়েছে ৩৭টি, মাদক পাচারের মামলা হয়েছে ২০৫৭টি, ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৪টি, অস্ত্র মামলা হয়েছে ২৩৮টি, ডাকাতি মামলা হয়েছে ৬২টি, অপহরণ মামলা হয়েছে ৪৪টি এবং অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ২৪৩টি।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়