ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

শতাধিক কৃষকের সবজি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ

বাগেরহাট সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২৮ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৬:৫৩, ২৮ আগস্ট ২০২৩
শতাধিক কৃষকের সবজি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ

বাগেরহাট সদর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ রক্ষার অজুহাতে শতাধিক কৃষকের বিভিন্ন ধরণের সবজি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও সদস্য আলতাফ শেখের নেতৃত্বে প্রায় ১০ লাখ টাকার ফসল নষ্ট করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, ভৈরব নদীর পশ্চিম পাশে কোমরপুর এলাকায় নিজ মালিকানা ও সরকারি জমি লিজ নিয়ে মৎস্য ঘের করতেন কাটাখালী গ্রামের শতাধিক কৃষক। কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভৈরব নদী খনন করেন। খননের পর থেকে মৎস্য ঘের সংলগ্ন নদীর তীরে কৃষকরা নানা রকম সবজির আবাদ করতেন।

২০২০-২১ অর্থ বছরে সামাজিক বন বিভাগ এই নদীর পাড়ে ২০ হাজার ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করে। বনায়নের পরেও সামাজিক বন বিভাগের অনুমতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধের উপর স্থানীয় কৃষকরা ঢেঁড়স, লাউ, করল্লা, ডাটা, বরবটি, লাফা, সিম, ধুন্দলসহ নানা ধরণের সবজি চাষ করেন।

কিন্তু জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও তার সদস্যরা কৃষকদের গাছ লাগাতে নিষেধ করতেন। তাদের নিষেধ না মানায় সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে কৃষকদের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অশোক কুমার ভৌমিকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কৃষকরা।

শেখ এনায়েত নামের এক কৃষক বলেন, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে নিজেদের মৎস্য ঘের সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে ঢেঁড়স, লাউ, করল্লা, ডাটা, বরবটি, লাফা, সিম, ধুন্দলসহ নানা ধরনের সবজি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গাছ রক্ষার অজুহাতে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও তার লোকজন আমাদের গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। আমার ঘেরের ঘরও ভেঙ্গে ফেলেছে তারা। গাছ রক্ষা তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, আমরা যাতে সবজি এবং ঘেরে মাছ চাষ না করতে পারি এজন্য তারা এটা করেছে। আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই।

জামিলা বেগম নামের এক নারী কৃষক বলেন, সবজি লাগিয়ে কিছু আয় করতাম। কিন্তু অশোক কুমার ভৌমিকের তা সহ্য হয়নি। এ কারণেই তারা আমাদের সবজি গাছ কেটে ফেলেছে।

কাওছার আলী মোড়ল নামের এক কৃষক বলেন, বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছিল। ফলও হয়েছিল কিছু গাছে। কিন্তু সব গাছ কেটে আমাদের শেষ করে দিয়েছে। এতে কৃষকের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শেখ নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ফলন্ত গাছ কাটায় যে কষ্ট পেয়েছি, আমার গলা কেটে ফেললেও এত কষ্ট পেতাম না।

সঞ্জয় নন্দি নামের আরেক কৃষক বলেন, বন বিভাগ লাগিয়েছে ফলজ ও বনজ গাছ। আমাদের সবজি গাছ তাদের গাছের কোনও ক্ষতি করেনি। কিন্তু আমাদের গাছ কাটল কেন। এছাড়া, বন বিভাগ তো আমাদের সবজি চাষ করতে নিষেধ করেনি।

ভৈরব নদীর তীরে করা এই বনায়ন পাহারা দেওয়ার জন্য সামাজিক বন বিভাগের পক্ষ থেকে রুহুল আমিন ও সোবহান শেখ নামের দুইজন পাহারাদার রয়েছেন। গাছ কাটার বিষয়ে তাদেরকেও কিছু বলা হয়নি বলে জানান রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে গাছ পাহারা দেই। সমিতির লোকজন সবজি গাছ কাটবে এটা আমাকে বলেনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ বলেন, গাছ কাটায় কাটাখালী এলাকার শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তদন্তপূর্বক দোষীদের বের করে শাস্তি এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি।

সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক বলেন, বন বিভাগের নির্দেশে আমরা সবজি গাছ কেটেছি। গাছ রক্ষার জন্যই এই গাছ কাটা হয়েছে।

তবে বন বিভাগ বলছে, কৃষকদের সবজি গাছ কাটতে কাউকে বলা হয়নি। সমিতির সভাপতি নিজের ইচ্ছায় এই গাছ কেটেছেন।

সামাজিক বন বিভাগ বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ এসএফএনটিসির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিন্ময় মধু বলেন, কৃষকদের সবজি গাছ কাটতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। গাছ কাটার খবর পেয়েছি। দুপক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা হবে।

শহিদুল/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়