ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

নতুন ফ্লাট পাচ্ছেন স্বর্ণখোলার ৮৮ হরিজন পরিবার  

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১১:০৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
নতুন ফ্লাট পাচ্ছেন স্বর্ণখোলার ৮৮ হরিজন পরিবার  

চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮ পরিবার পাচ্ছেন দু’টি ৫ তলা ভবনে আলাদা আলাদা ফ্লাট। 

ইউএনডিপি কর্মকর্তা জানান, যাদেরকে এই ভবনে স্থানান্তর করা হবে ওই জায়গা খালি সাপেক্ষে ওখানে আরও ২টি বিল্ডিং করার কাজ হাতে নেওয়া হবে। 

অন্যদিকে পৌর মেয়র জানালেন, এখন ফ্লাট নির্মাণ হলেও সেখানে হরিজনদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কমিউনিটি সেন্টার ও বাচ্চাদের জন্য বিনোদনমুখী পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বর্ণখোলায় গেলে ভবন দু'টির ছাদ পেটানোসহ কয়েক তলার অবয়বে রূপ দেওয়ার কাজ চলমান দেখা যায়।

চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপি সূত্রে জানা যায়, শহরের ৯নং ওয়ার্ডের স্বর্ণখোলার হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য ৫ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ভবন তৈরিতে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করছে সরকার। ইউএনডিপি, এলজিইডি ও চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই ভবন দু'টির কাজ সমাপ্ত করতে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর এতে খুবই খুশি শহরের পরিছন্নতাকর্মী হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন।

এ বিষয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের আকাশ, বিপ্লব, খোকনসহ একাধিক হরিজনরা জানালেন, নতুন ভবন হওয়ায় তারা খুব খুশি। তবে তাদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে একটি এক কক্ষের ফ্লাট। তার মধ্যেই রান্নাঘর ও টয়লেট থাকবে। যা অনেকটা ছোট মনে হচ্ছে। তবে ধর্মীয় দিক ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা দিকটি মাথায় রেখে ভবনগুলোতে যদি ২টি কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেট সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর শহরের ইউএনডিপি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য স্বল্প ব্যয়ে আবাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ভবন দু'টি করা হচ্ছে। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। এখানে হরিজনদের ফাঁকা স্থানে ২টি বিল্ডিংয়ে ৮৮টি ফ্লাটে ৮৮টি পরিবারের মাঝে ফ্লাট হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাদেরকে এই বিল্ডিং দু'টিতে স্থানান্তর করা হবে তাদের বর্তমান জায়গা খালি করা সাপেক্ষে আরও ২টি বিল্ডিং করার কাজ পরবর্তীতে হাতে নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে এখানে ইউএনডিপি কর্তৃক অর্থায়ন করা হলেও এই ভবন দু'টির বর্ধিত কাজসহ মোট প্রায় ১০ কোটি টাকার পুরোটাই সরকার দিচ্ছে। আমরা তাদের বসবাসের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে রুমের সাইজ ১৩ ফুট বাই ১০ ফুট করছি। প্রতিটি ভবনের নীচ তলায় বিয়েশাদীর জন্য কমন স্পেস, ২ তলায় ১২ টি পরিবার ও ৩ তলায় ৮টি পরিবার রাখার পরিকল্পনা করছি। এছাড়া ৪র্থ ও ৫ তলায় আমরা রিএরেঞ্জ করার সুযোগ থাকলে সেটা অবশ্যই করবো। এমনকি তাদের মৃত্যুর পর মরদেহ নামানোর জন্য একটা কমন স্পেসের ব্যবস্থা করবো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য জনবান্ধব নানামুখী উদ্যোগের মধ্যেই একটি হচ্ছে চাঁদপুর পৌরসভার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসন প্রকল্প। এটি এলআইইউপিসি প্রজেক্টের মাধ্যমে হলেও অর্থায়ন করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৮৮টি ফ্লাটে সেখানে যারা থাকবেন তাদের ভালো ও উন্নত পরিবেশে স্থানান্তর করতে সক্ষম হবো। সারাদেশের মধ্যে অন্য পৌরসভাগুলোর আগে চাঁদপুর পৌরসভা এই ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করবে আশা করছি। এতে করে পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বহুতল ভবন হরিজনদের জন্য আমরা নির্মাণের সুযোগ পাবো। সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সবাইকেই আমরা ফ্লাট দিতে পারবো।

নকশা ও ফ্লাট ছোট প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বলেন, ভবন তৈরির এই নকশাটা পৌরসভা করেনি বরং প্রজেক্টের মাধ্যমে তৈরি করা। তারা একান্নবর্তী পরিবারের মতো যেভাবে ছিলেন ফ্লাটে থাকবেন আলাদা আলাদা ভাবে।যেটি তারা বুঝতে ভুল করলেও পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি বুঝানো হয়েছে। মূলত সবাই মিলে একটা ফ্লাট নয় বরং তাদের বাবার জন্য আলাদা এবং সন্তানদের জন্য আলাদা ফ্লাট থাকবে। আর এই ফ্লাটগুলো সরাসরি তাদের নামেই আমরা বরাদ্দ দিয়ে দিবো। আমরা প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি, যাতে পরের প্রজেক্টের ফ্লাটগুলো আরেকটু বড় করা হয়। তবে আমরা তাদের থাকার পরিবেশটি আরও উন্নত করে দিতে অর্থাৎ তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আরও যে নাগরিক সুবিধা যেমন কমিউনিটি সেন্টার, বাচ্চাদের জন্য পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিবো।

উল্লেখ্য, গেলো ২০২২ সালে আগস্ট মাসে এ ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প চাঁদপুর এসে পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও তার প্রতিনিধিদল। তখন ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছিলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে হরিজনদেরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, পড়াশোনা, আত্নকর্মসংস্থান বিষয়ে সচেতন করতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। যা আগামিতেও অব্যাহত থাকবে।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়