ফরিদপুর-৩
নৌকার প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে কয়েকজন হেভিওয়েট
তামিম ইসলাম, ফরিদপুর || রাইজিংবিডি.কম
এ কে আজাদ ও বিপুল ঘোষ
ফরিদপুর জেলার মোট চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। জেলা সদরের আসন হওয়ায় এটির প্রতি প্রার্থী ও ভোটারদের বিশেষ নজর থাকে। পূর্বে এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তিনি মন্ত্রী হয়েছেন।
ফরিদপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি ২০০৮ সালে এই নির্বাচনী আসন থেকে জয়ী হন, পরে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হন। এরপর এই আসন নিয়ে কারো মাথাব্যথা ছিল না। এই আসনে তাকে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ফরিদপুরে শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন যে আগামীতে মনোনয়ন পাচ্ছেন না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বয়সের কারণে তিনি নিজে এবার নির্বাচন করবেন না। এ কারণে আগামী নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত যদি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রার্থী না হন, তাহলে এই আসনের অন্যতম দাবিদার হলেন হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ। তিনি ফরিদপুরবাসী এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এই আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, কাজী জাফরউল্লাহকে মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর আসন থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হবে এবং ফরিদপুর-৩ আসনে তাকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হবে কি-না, সেরকম নিশ্চয়তা আওয়ামী লীগের কোনো মহল থেকে পাওয়া যায়নি।
আবার এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শামীম হক। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা সভাপতি হওয়ার আগে সহ-সভাপতি, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদপুরের মানুষের জন্য দীর্ঘ দিন তিনি শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ নানা সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
শামীম হক বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এমন সময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিয়েছেন, যখন এই অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক ছিল। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যার দিকনির্দেশনায় দলকে সুসংগঠিত করেছি, মাঠকে শক্তিশালী করেছি। এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে শামীম হক বলেন, ‘আমার লক্ষ্য একটাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর জেলার সবগুলো আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া।’
ফরিদপুর সদর তথা ফরিদপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনীত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে শামীম হক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা ফরিদপুর-৩ আসন থেকে আমাকেই নৌকার মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন দিলে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ।’
ফরিদপুর-৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য ফরিদপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিক বিপুল ঘোষ। দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন তিনি। বিপুল ঘোষ ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ফরিদপুর জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং একাধিকবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিপুল ঘোষ বলেন, ‘আমাকে নেত্রী মনোনয়ন দেন বা না দেন, আমার কষ্ট থাকবে না। কিন্তু টেন্ডারবাজ, বালুখেকো, মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক, জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন কেউ যেন মনোনয়ন না পায়, সেটাই কামনা করি।’
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম কার্যকরী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আহাদ সেলিম ও যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেন।
বিএনপির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা প্রফেসর আব্দুত তাওয়াব সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে নিজেকে জানান দিচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর সদর আসনে মোট ভোটার প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬১ হাজার এবং নারী ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ জন।
/বকুল/