ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

অর্গানিক বিডি’র লেবেলে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মধু!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:২৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অর্গানিক বিডি’র লেবেলে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মধু!

চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লূকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে মিশ্রন তৈরি করে তাতে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে মধুর ফ্লেভার আনা হয়। এরপর এই মিশ্রণ বোতলজাত করে তার গায়ে অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এভাবেই তৈরি হচ্ছে সুন্দরবনের কথিত খাঁটি মধু।

খুলনায় ১০৫ কেজি ভেজাল মধুসহ দু'জন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

এর আগে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) খুলনা মহানগরের আড়ংঘাটা থানা এলাকার সিটি বাইপাস সড়কের ভেজাল মধু তৈরির কারখানা থেকে তাদেরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা শ্যামনগরের মাথুরাপুর এলাকার মো. আশরাফুল ইসলাম রিপন (৩৪) ও শ্যামনগরের বাদঘাটা এলাকার শেখ শাহরিয়ার মাসুদ (৩৮)।

খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মো. নুরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গোপন সংবাদে ভেজাল মধু উৎপাদিত হচ্ছে জানতে পেরে বাইতুস শরিফ জামে মসজিদের পূর্ব পাশের টিনসেড বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১০৫ কেজি ভেজাল মধু এবং ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। সরঞ্জামের মধ্যে ছিলো- একটি হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামে রক্ষিত ১০ কেজি চিনির সিরা, ফ্রেস ২ লিটারের পানির বোতলে রক্ষিত জালানো মধু, যা রং হিসেবে মধু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাদা প্লাস্টিকের কৌটায় রক্ষিত ফিটকিরি চূর্ণ, একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় রক্ষিত ১২ কেজি চিনি, একটি প্লাস্টিকের পানির জার, একটি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের অর্ধেক ড্রাম, যা মধু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া একটি এক বার্নার বিশিষ্ট গ্যাসের চুলা, একটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র, ১৪টি প্লাস্টিকের তৈরি নীল কর্কযুক্ত সাদা রংয়ের বোতল, কাঁচের তৈরি বোয়েম ১২টি, সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ছোট কৌটা ২৪টি, সাদা কর্কযুক্ত প্লাস্টিকের ছোট বোতল ৩৬টি, একটি সবুজ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক (মধু ঢালার পাত্র) এবং কালো জিরা ফুলের মধু লেখা স্টিকার ৫টি।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আশরাফুল ইসলাম রিপন ও শেখ শাহরিয়ার মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল মধু উৎপাদন করে আসছিলেন। এই ভেজাল মধু তৈরির জন্য তারা প্রথমে চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লুকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে নেয়। তারপর ওই মিশ্রণ ঠাণ্ডা হলে তাতে মধুর ফ্লেভার আনার জন্য সামান্য পরিমাণ মধু মেশানো হয়। এরপর ওই মিশ্রণ বোতলজাত করে তার গায়ে ‘অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এই মধু তারা অনলাইন এবং অফলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। যা পরবর্তীতে খাঁটি মধু হিসেবে ভোক্তার কাছে যায়। এই মধু জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এতে কিডনি নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশরাফুল ইসলাম রিপন ও শেখ শাহরিয়ার মাসুদ মিলে নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন তানিসা আবাসিক এলাকা লাইন, বিল পাবলা, এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল মধু উৎপাদন করে আসছিলেন। 

নূরুজ্জামান বলেন, ৬-৭ মাস আগে এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এই ভেজাল মধু তৈরি করে খুলনাসহ সারা দেশে তাদের লোক দিয়ে সরবারহ করতো। রিপনের বাবা আব্দুর রশিদ ওরফে চিনি রশিদ এই ভেজাল মধু তৈরি করতেন। ২০২২ সালে শ্যামনগরে ভেজাল বিরোধী অভিযানের সময় তার বাবা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। রিপন তার বাবার কাছ থেকে এই ভেজাল মধু তৈরির হাতে-খড়ি নিয়েছেন বলে ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। 

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আরও জানান, আসামি আশরাফুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে একটি মারামারি মামলা এবং একটি মাদকের মামলা (৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত) রয়েছে। অপর আসামি শেখ শাহরিয়ার মাসুদের বিরুদ্ধে একটি মাদকের মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আড়ংঘাটা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়