ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

শিকল থেকে মুক্তি পেলো জুনায়েদ, পড়ালেখা শিখে হতে চায় পাইলট

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৬, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২০:৩০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শিকল থেকে মুক্তি পেলো জুনায়েদ, পড়ালেখা শিখে হতে চায় পাইলট

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে বিমানে ওঠা জুনায়েদ

সংবাদ প্রকাশের পর শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে ভিসা ও পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে ওঠা আলোচিত শিশু জুনায়েদ মোল্লা। না বলে আর কোথাও যাবে না, এমন আশ্বাস পেয়েই তার পায়ের শিকল খুলে দিয়েছে পরিবার। এখন জুনায়েদ পড়ালেখা শিখে পাইলট হতে চায়। 

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলে দেওয়া হয় জুনায়েদের পায়ের শিকল। এরপরই সে ঘরের বাইরে মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ির পাশের খালে গোসল করে জুনায়েদ। তবে এখনো জুনায়েদকে এক নজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন: ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে উঠে বসা শিশু জুনায়েদ এখন শিকলবন্দি

আরো পড়ুন:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা বিমানবন্দর থানা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পারইহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় জুনায়েদকে। এরপর বারবার বাড়ি থেকে পলানোর কারণে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়। জুনায়েদের এক পা শিকল দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর খুলে দেওয়া হয় শিকল। এরপর থেকে মুক্ত পরিবেশে আবারো ঘুর বেড়াতে পারছে শিশুটি। 

জুনায়েদের দাবি, পরিবার থেকে পড়ালেখার খরচ দিতে না পারার কারণে মাদরাসা থেকে বারবার পালিয়ে যেতো সে। তবে এবার আর পালানো নয়, বরং পড়ালেখা শিখে পাইলট হতে চায় জুনায়েদ। ঘুরতে চায় দেশ বিদেশ।

জুনায়েদ জানায়, মাদরাসায় পড়ার সময় আব্বার কাছে কাগজ ও কলম কেনার টাকা চাইতাম। আব্বা পড়ালেখার খরচ দিতে পারতো না। খাতা–কলমের জন্য মাদরাসার শিক্ষকরা মারতো। মার খাওয়ার ভয়ে মাদরাসা থেকেও মাঝে মধ্যে পালিয়ে যেতাম। কিন্তু এখন আমি পড়ালেখা শিখতে চাই। পাইলট হয়ে বিমানে করে দেশ-বিদেশ ঘুরতে চাই। সরকার যদি আমাকে সাহায্য করতো আমি পড়ালেখা শিখতাম।

জুনায়েদের চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, ‘জুনায়েদ পাগল নয় যে ওকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবো। ওর শিকল খুলে দেওয়া হয়েছে। সে এখন আগের মত ঘুরে বেড়াতে পারছে। ওর বিমানে ওঠার শখ ছিল। কিন্তু ধরা পড়ায় জুনায়েদের বিমানে চাড়ার স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। তাই বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে জুনায়েদের ইচ্ছা পূরণ করার দাবি জানাই।’

জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ‘বয়স যখন ৬ বছর, তখন জুনায়েদকে মাদরাসায় ভর্তি করাই। নিজের মাকে দেখার জন্য মন সবসময় ব্যাকুল থাকত ওর। মাঝে মধ্যে সে মাদরাসা থেকে পালিয়ে প্রথমেই তার মায়ের কাছে যেত। ওর মা তাকে আশ্রয় দিত না। কষ্টে সে অন্যত্র যেত। সেখান থেকে খুঁজে নিয়ে আসতাম। গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে পায়ে শিকল দিয়েছিলাম যাতে সে আবার পালিয়ে যেতে না পারে। খবর প্রকাশের পর ওর পায়ের শিকল খুলে দিয়েছি।’

গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ওঠে জুনায়েদ। রাত সোয়া ৩টার দিকে ওই ফ্লাইট উড্ডয়নের কথা ছিল। এর আগে প্রায় ঘণ্টাখানেক ওই ফ্লাইটের সিটে বসে ছিল জোনায়েদ। পরে এক যাত্রী তাকে অন্য সিটে বসতে বললে ধরা পড়ে জুনোয়েদ পাসপোর্ট, টিকিট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠেছে। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ শিশুটিকে আটক করে। গত বুধবার পুলিশ জুনায়েদকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়