ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

জুয়া ও নির্যাতন বন্ধে থানায় অভিযোগ করায় স্ত্রীকে ডিভোর্স

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৯:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জুয়া ও নির্যাতন বন্ধে থানায় অভিযোগ করায় স্ত্রীকে ডিভোর্স

দুই সন্তান নিয়ে অনশনে স্বামীর বাড়িতেই গৃহবধূ 

১৬ বছরের সংসার লিজা ও শাহীন দম্পতির। তাদের ঘরে ১০ ও ১২ বছরের দুইটি সন্তান রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় কখনো সুখের মুখ দেখেননি লিজা। স্বামীর জুয়া খেলার টাকা যোগাড় করতে প্রতিনিয়ত প্রবাসী ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হয়েছে তাকে। টাকা না পেলেই লিজার ওপর চলতো শারীরিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বোনের সুখের জন্য প্রবাসী ভাই প্রায়ই টাকা দিতেন শাহীনকে। এরপরেও তাদের সংসার টেকেনি। 

জুয়া খেলা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় শাহিনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন লিজা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহীন গত তিনদিন আগে লিজাকে ডিভোর্স দেয়। তবে লিজার প্রাপ্য কাবিনের ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি শাহীন। 

এদিকে থানায় অভিযোগ দেয়ার ৪ দিন পার হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় লিজা দুই সন্তানকে নিয়ে গত তিনদিন ধরে শাহিনের বাড়িতে অনশনে বসেছেন। 

জানা যায়, ১৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে শাহিনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পাটুলিপাড়া গ্রামের জলিল সরদারের মেয়ে লিজার বিয়ে হয়। শাহিন যুবক বয়স থেকেই জুয়া খেলায় আসক্ত। বিয়ের সময় লিজার পরিবার থেকে নেওয়া যৌতুকের টাকা সে সময় জুয়া খেলে শেষ করে বলে অভিযোগ লিজার পরিবারের। এরপর অনেকবার শাহীন তার স্ত্রীকে চাপ দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে জুয়া খেলে। এভাবে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শাহিন জুয়া খেলে টাকা হেরেছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেয়ে শাহীন একাধিকবার আত্মগোপনে থাকে। পরে লিজার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে শাহীন এনজিওর ঋণ পরিশোধ করে। 

গত কয়েক বছর লিজার পরিবার শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু জুয়া খেলার টাকার না পেয়ে লিজার ওপর মারধরের মাত্রা বেড়ে যায়। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হকসহ, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ে সালিশি বৈঠক করে সমাধান করতে ব্যর্থ হন। এর পরদিনই শাহীন লিজাকে ডিভোর্স দেয়।

লিজা বেগম বলেন, সালিশের দিন রাতেও ব্যাপক মারধর করে শাহীন। এক পর্যায়ে গলায় গামছা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকেই দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, যৌতুকের জন্য প্রায়ই মারধর করতো গৃহবধূ লিজাকে। এমনকি সালিশে বসার আগেও ওই গৃহবধূকে মারধর করে তার স্বামী। এরপর ডিভোর্স দেওয়ায় ওই নারী এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, শাহিনের জুয়া খেলার কারণেই পরিবারে অশান্তি। তবে সালিশ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু শাহীনের প্রভাবশালী এক আত্মীয়ের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূ অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশের কিছু করার নেই। তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

অনশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা অনশনের কোন বিষয় নয়। তার ভাইয়েরা বিষয়টি দেখতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাহীন রহমান/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়