ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

মুখ থুবড়ে পড়েছে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
মুখ থুবড়ে পড়েছে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম

টাঙ্গাইল শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীটিতে আবার দূষণ বেড়েছে। অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে নদী। 

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় ৭ বছর আগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে গত ৪ বছর ধরে কার্যক্রম না থাকায় অবৈধ দখলদাররা ফের জেঁকে বসেছে। কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে নদীটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে। এতে নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রভাব পড়ছে পুরো জীববৈচিত্র্যে। নদীটি দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। এক সময় শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় নৌবন্দর ছিলো। দেশ-বিদেশে থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা আসতো এ নৌবন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে সব কিছুই যেনো রূপকথার গল্প। 

দীর্ঘদিন ধরে নদীটি ড্রেজিং না করায় নদীটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। এই সুযোগে দুই পাড়ের বাসিন্দারা কৌশলে প্রথমে ময়লা আবর্জনা ফেলে দখল করছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভবন, দেয়াল ও স্থাপনা নির্মাণ করে নদীটি দখল করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিল কারখানা ও শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি। 

নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে নামে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। ওই সময়ে শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখল মুক্ত করা হয়। গত চার বছর যাবত কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীটি কুচুরিপানায় ভর্তি। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদী থেকে কেউ কেউ মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

আকুরটাকুর পাড়ার বাসিন্দা আলতাব হোসেন বলেন, ৩০ বছর আগেও যে নদীতে গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করতাম। সেই নদীর পানি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগি। নদীতে মাছ তো দূরের কথা, পানিতে বসবাসকারী কোন পোকাও থাকে না।

সদর উপজেলার করটিয়া এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ফেলে নদীটি বিভিন্নভাবে দূষণ করা হচ্ছে। নদী থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীটি মানুষের উপকারের আসার পরিবর্তে অপরকারই হচ্ছে। তাই নদীটি উদ্ধারের জোর দাবি জানাই।

নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক রতন সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর শহরের নদীটি উদ্ধারের জন্য আমরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করি। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে নদীটি উদ্ধারের জন্য দখল মুক্ত করা হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে আর কোন কার্যক্রম না থাকায় নদীটি আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছিলাম নদীটি দখল ও দুষণমুক্ত করার জন্য ২৪০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু এর কোন কার্যক্রম নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, কয়েক বছর যাবত লৌহজং নদীর উদ্ধার কার্যক্রম থমকে আছে। বিষয়টি নিয়ে এনজিও সমন্বয় সভায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। বর্তমানে আইন লঙ্ঘন করে নদী দখল করা হচ্ছে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ড্রেনের লাইন নদীতে দেওয়া রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও নদীর ময়লা আবর্জনাসহ বাসায় টয়লেটের লাইন নদীতে দিয়ে দূষণ করছে। নদী দখল ও দূষণে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যথাযথ আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মির্জাপুর অংশে ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনঃখনন ও নদীর তীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শুকনো মৌসুমে কাজ ধরা হবে। এছাড়াও শহরের অংশে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম আগামি জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করা হবে।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়