ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

গ্রাহকের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পাওনা দেড় কোটি টাকা

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১০:৪৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গ্রাহকের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পাওনা দেড় কোটি টাকা

গ্রাহকের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পানি বিল বকেয়া রয়েছে দেড় কোটি টাকারও বেশি। সরবরাহকৃত পানির বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকায় বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রতি মাসে বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছেই। সর্বশেষ গত আগস্টে পানির বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। মোটা অংকের টাকা বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানা যায়, ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন করে ২০ হাজার ৪৮০ গ্রাহককে সরবরাহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চালাতে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহককে পানি সরবরাহ করে পৌরসভার আয় হওয়ার কথা ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু মোট গ্রাহকের মধ্যে প্রায় অর্ধেকও নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করেন না। এর মধ্যে, প্রায় ৬ শতাধিক গ্রাহকের পানির বিল বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিল বকেয়া আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা বিশেরও অধিক। সব মিলিয়ে আগস্টে পৌরসভার পানির বিল বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ৯৯ হাজার ৬১৯ টাকা। বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পৌরসভা।

পৌরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৩ লাখেরও বেশি মানুষ সরবরাহকৃত পানির সুবিধাভোগ করছেন। আবাসিক এলাকায় পানি বিল প্রতি ইউনিট সর্বনিম্ন ৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ টাকা। বাণিজ্যিক মিটার সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির বিল ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৮ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা। এসব গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা ২৭ হাজার ৭৪১ ঘন মিটার। বিপরীতে গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা পূরণ হয় ১৯ হাজার ৩১৭ ঘন মিটার। চাহিদার থেকে ৮ হাজার ৪২৪ ঘন মিটার পানি কম পাচ্ছেন পৌরবাসী।

এসব নাগরিকদের পানির চাহিদা পূরণে ৩০০ থেকে ৩৫০ এমএম সাইজের পাম্প আছে ১৮টি। প্রতিটি পাম্পের পানি উত্তোলন ক্ষমতা ৩৯৭ থেকে ৯৯৩ ঘন মিটার পর্যন্ত। ৭০০ ঘন মিটারের দুটি উচ্চ জলাধার রয়েছে। যা শহরের দুটি জায়গায় অবস্থিত।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আগস্ট মাসের পানির বিল পরিশোধ করেছেন ২৫০ জন। এসব গ্রাহকের ৩৭ হাজার ২০৮ টাকা বিল বকেয়া থাকলেও পরিশোধ করেছেন ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা। চলতি মাসে (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) ২০ হাজার ২৩০ গ্রাহক পানির বকেয়া বিল পরিশোধ করেননি।

পৌরসভার পানির সরবরাহ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গ্রাহকদের নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হয় সরবরাহকৃত পানির বিল পরিশোধ করতে। এমনও গ্রাহকও আছে গত দুই-তিন বছর ধরে পানির বিল পরিশোধ করেন না। শহরের বহুতল ভবনগুলোর প্রতিটি ইউনিটে আলাদাভাবে পানির লাইন থাকায় বকেয়া বিলের পরিমাণ আরও বাড়ছে। ব্যয়ের তুলনায় আয়ের খাতায় মোটা অংকের ঘাটতি থাকায় দিনে মাত্র ৩ বার লাইনে পানি সরবরাহ করা যায়। প্রি-পেইড মিটার আর প্রায় অর্ধশত কর্মচারীর মাসিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হয় এই বিভাগকে। ফলে পৌরসভার অন্য খাত থেকে পানি সরবরাহ বিভাগের ঘাটতি পূরণ করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার নাগরিকদের সেবাগুলোর মধ্যে পানি সরবরাহ সেবা অন্যতম। পৌরসভার সাড়ে ৩ লাখ নাগরিক এই সেবার আওতাভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল-কর্মচারীর বেতন আর অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ৩০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে আয়ের টার্গেট ৪২ লাখ টাকা থাকলেও ১২ লাখ টাকা ঘাটতি থাকে। মোটা অংকের বিল বকেয়া থাকায় পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব টাকা উত্তোলন করা গেলে নাগরিকরা নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরারহ সেবা পাবেন।

এদিকে, বিপুল পরিমাণে বকেয়া উদ্ধারে নানান পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। বকেয়া বিলের ২৫ শতাংশ রেয়াতের ঘোষণা দিয়েও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতো কঠোর সিদ্ধান্তর কথা জানিয়েছে পৌর প্রশাসন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনীন ফাতেমা জিনিয়া বলেন, নাগরিকদের পানির বিল দেড় কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রয়েছে। বিপুল পরিমাণ বকেয়া উঠে আসলে নাগরিকরা নিরবচ্ছিন্ন পানি সেবা পাবেন। আমাদের কাজ নাগরিকদের সেবা দেওয়া, তারা যদি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে পৌরসভা কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, যারা যথাসময়ে পানির বিল পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও অনেকে বিল পরিশোধ করেননি। যারা বিল পরিশোধ করেনি, তাদের পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌরসভার উচ্ছেদ কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, তারা তাদের কাজ চলমান রেখেছে।

কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়