ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ভোগান্তিতে কুমিল্লার নগরবাসী

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ভোগান্তিতে কুমিল্লার নগরবাসী

দেশের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের শহর কুমিল্লা। শহরটি ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা লাভ করলেও মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। তাই দ্রুত মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে কুমিল্লার বিদ্যমান সমস্যগুলো দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী। 

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়, চকবাজার, টমছম ব্রিজসহ বিভিন্ন সড়কের ওপর গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এছাড়া শহরের অধিকাংশ সড়কের ফুটপাতে বসছে দোকানপাট। চলাচলের রাস্তাটুকুও পাচ্ছেন না পথচারীরা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এছাড়া রাস্তা খোঁড়াখোঁড়ির ঝামেলাতো রয়েছেই। সিটি করপোরেশনের চলতি সড়ক উন্নয়নমূলক কাজের ধীরগতির কারণে একদিকে যেমন ধুলা বালির কষ্ট বাড়ছে, অপরদিকে রাস্তা একমুখী হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

এদিকে, ময়লা অপসারণ এবং ফেলার নির্ধারিত জায়গার অভাবে আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে যত্রতত্র। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এছাড়া, নগরীর অন্যতম সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। নগরীর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পাড়ায় বাড়ছে জলাবদ্ধতা। ড্রেনগুলো ক্রমেই সরু হচ্ছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে শহরের সড়ক ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে ময়লা পানি।

সম্প্রতি ইউএসএআইডির সহায়তায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত স্ট্রেন্দেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় এক কর্মশালায় এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পিত নগরায়ণের মধ্য দিয়ে দেশের প্রাচীন শহর কুমিল্লা উন্নত নগরীতে রূপান্তরিত হোক এমন প্রত্যাশা শহরবাসীর।

নগরীর চকবাজার একালাকার বাসিন্দা বিপ্লব সরকার বলেন, সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে শহর কোনো শৃঙখলা নেই। আমাদের শহরের সব চেয়ে বড় সমস্যা যানজট। এছাড়া, এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে পুরো শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন, শহরে প্রতিনিয়ম মানুষ ও যানজট বাড়ছে। কিন্তু রাস্তা তো সে পরিমাণে আর বাড়ছে না। গত ১২ বছর ধরে শুনছি মাষ্টারপ্ল্যান হবে। কিন্তু তার সুফল দেখছেন না নগরবাসী।

এদিকে কুমিল্লা শহরের নগরবিদরা বলছেন, দ্রুতই কুমিল্লা নগর বড় হচ্ছে। বাড়ছে মানুষ, যানবাহন ও স্থাপনা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। তাই বিলম্ব না করে  কুমিল্লা নগরীকে একটি পরিকল্পিত নগরায়ণের আওতায় আনতে মাস্টারপ্ল্যান জরুরি হয়ে পড়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনলে সুশৃঙ্খল নগরায়ণের পথ উন্মোচিত হবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে এই সিটি করপোরেশনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যানজট নিরসন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। দৃষ্টি নন্দন ব্রিজ, নদী শাসন, ড্রেন নির্মাণ, রাস্তাঘাটের করা ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে নগরীর আধুনিকায়নে এক ধাপ এগিয়ে যাবে কুমিল্লা নগরী।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন, ‘পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে রেখেছি। এটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।’

পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘বিগত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ভুল প্ল্যানের কারণে সমগ্র সিটি করপোরেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা ও যানজটের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করবো। তার (সাক্কু) পুরাতন মাষ্টারপ্ল্যানের কারণে শহরের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য নতুন করে একটি মাস্টারপ্ল্যান করেছি। নতুন বছরে আশা করি এ প্ল্যান পাস হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়