ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

এসপিজির ফাঁদে নিঃস্ব ঠাকুরগাঁওয়ের ৪০০ পরিবার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১১:৪৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
এসপিজির ফাঁদে নিঃস্ব ঠাকুরগাঁওয়ের ৪০০ পরিবার

অল্প পুঁজি ও স্বল্প সময়, নেই কোনো পরিশ্রম। ঘরে বসেই মিলবে লাখ লাখ টাকা। এমন প্রলোভনে অনলাইন অ্যাপ ‘এসপিজি’তে অর্থ বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয় সদর উপজেলার কচুবাড়ি গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় যুবক ফিরোজের প্ররোচনায় বিভিন্ন বেকার ও স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ গৃহিণীরা এসপিজিতে অর্থ বিনিয়োগ করেন। তবে কোনও টাকা ফেরত দেওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে কোম্পানির কার্যক্রম। পালিয়ে গেছেন ফিরোজ।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রলোভন দেখানো হয়, হাতে থাকা স্মার্ট ফোনে দিনে ১-২ ঘণ্টা কাজ করলেই প্রতিদিন আয় হবে ৪০০-১২০০ টাকা। শুধুমাত্র এসপিজির সদস্যরাই পাবেন এ সুযোগ। টিকটক ও ফেসবুক রিলের স্ক্রিনশট নিয়ে এসপিজি নামক একটি অ্যাপে আপলোড করাই এই সদস্যদের কাজ। প্রতিটি স্ক্রিনশটের জন্যে পারিশ্রমিক হিসেবে এসপিজি ক্রেডিট অপশনে যোগ হবে ২৫-৩০ টাকা।

এসপিজিতে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সদস্য হলে ১৬টি স্ক্রিনশট আপলোড করে ২৫ টাকা হিসেবে দৈনিক ৪০০ টাকা আয় করা যাবে। আর ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে স্টার সদস্য হলে ৪০টি স্ক্রিনশট আপলোড করে ৩০ টাকা হিসেবে আয় হবে দৈনিক ১২০০ টাকা।

নির্দিষ্ট সময় পরে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে উঠানো যাবে সেই টাকা। প্রথমে কিছু সদস্য টাকা পেলেও পরে আর কেউ টাকা ফেরত পায়নি। শুধুমাত্র কচুবাড়ি গ্রাম থেকেই ৫-৭ কোটি টাকা এসপিজি নিয়ে গেছে বলে জানান প্রতারণার শিকার সদস্যরা।

গ্রামবাসী জানান, এসপিজির কথিত ম্যানেজার ফিরোজ প্রতিবেশী হওয়ায় সহজেই তার কথায় বিশ্বাস করে ফাঁদে পা দিয়েছেন দরিদ্র গ্রামবাসী। অনেকে গবাদিপশু বিক্রি করে বা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে এসপিজির সদস্য হয়েছেন।

স্কুলছাত্র সুজন বলে, আমার বাবা একমাত্র সম্বল গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট ফোন ও এসপিজির একাউন্ট করি। এখন এসপিজি আমাদের নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেছে।

দিনমজুর রতন বলেন, সুদের উপরে কিছু টাকা নিয়ে ছেলেকে দিয়েছি। ভেবেছি ছেলের ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারব। এখন নাকি কোম্পানি আর নাই। আমি এই সুদের টাকা কীভাবে শোধ করবো তা বুঝতে পারছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, বিভিন্ন জেলায় ম্যানেজার নিয়োগ করে সারা দেশ প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে এসপিজি। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা এই সাইটে বিনিয়োগ হয়েছে। দ্রুত এই প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জেলা পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, সারা দেশেই এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছেন প্রতারকরা। কেউ প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি। তাহলে দ্রুত প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।

হিমেল/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়