ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

শিশু সুমাইয়ার চা বিক্রিতে চারজনের সংসার 

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ৩ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৪:৫৭, ৩ অক্টোবর ২০২৩
শিশু সুমাইয়ার চা বিক্রিতে চারজনের সংসার 

যে বয়সে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সেই জীবন-জীবিকার তাগিতে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু সুমাইয়া হাতে তুলে নিয়েছে চা তৈরির গরম কেতলী।

শিশু সুমাইয়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ পূর্বের হাটখোলা এলাকার যক্ষা রোগে আক্রন্ত মো. সায়েম আলী ফকির (৬৫) এর মেয়ে ।

গাড়াদহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, গত ১ বছর ধরে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়ার বাবা সায়েম আলী ফকির শয্যাশায়ী। তার ৪ মেয়ে। কোনো পুত্র সন্তান নেই। এরমধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সে গার্মেন্টস শ্রমিক, স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে। মেঝ মেয়ে মারা গেছে। ৩য় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৪র্থ মেয়ে সুমাইয়া বাড়ির পাশেই ব্র্যাক স্কুলে পড়ালেখা করে। অনেক চিকিৎসা করেও সুস্থ হয়নি সায়েম আলী।

ইয়াকুব আলী বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে সংসারে আয় উপার্জনের আর কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় সুমাইয়া স্কুল ছেড়ে তার বাবার দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করে। গত ৩ মাস আগে তার বাবার যক্ষা রোগ শনাক্ত হয়। শেষ সময়ে রোগ ধরা পড়ায় চিকিৎসার খরচ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সুমাইয়ার পরিবার।

সুমাইয়ার বাবা সায়েম আলী বলেন, সরকারি খাস জায়গায় এলাকাবাসি একটি ঘর তুলে দিয়েছেন। সেই ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকি। এর মধ্যে মরণঘাতী যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছি। সংসার চালানোর মতো আর কোনো উপায় না থাকায় শিশু মেয়েকে চা বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন।

সুমাইয়ার মা মমতা বেগম বলেন, সবাই যদি আমাদের পাশে দাঁড়ান ও সাহায্য করেন, অন্তত একটা গরু ও খাদ্য সামগ্রী দেন এবং স্বামীর ওষুধের ব্যবস্থা করেন তাইলে সুমাইয়া আবার স্কুলে যেতে পারবে।

আলাপকালে শিশু সুমাইয়া জানায়, ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে সে বাবার চায়ের দোকানে যায়। একদিন চা বিক্রি না করলে মা-বাবার মুখে খাবার জোটে না এবং অসুস্থ বাবার ওষুধ কেনা হয় না। এ কারনে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চায়ের দোকানে চা বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ২২০ কাপ চা বিক্রি করে ৩ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে চাল-ডাল কেনার পর বাকি টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনতে হয়। এ ভাবেই গত ১ বছর ধরে চলছে তাদের অতিকষ্টের সংসার।

সুমাইয়া বলে, আমি লেখাপড়া করতে চাই। আবারও স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার। সমাজের বিত্তবান মানুষেরা আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতাম।

দ্যা বার্ড সেফটি হাউজের চেয়ারম্যান মানবতাবাদী ও পরিবেশকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, মানুষের সমস্যার কথা জানলেই ফেসবুকে পোস্ট করি। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে ৯৫ হাজার ফলোয়ার পেইজে ৩৬ হাজার ফলোয়ার আছে। এছাড়াও  ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক আছে, ‘আমাদের সিরাজগঞ্জ’ নামে ফেসবুক গ্রুপে সাড়ে চার লক্ষ সদস্য আছে তারাই মূলত আমাকে ফেসবুক ইনবক্সে, ইমেইলে আর ফোন করে মানুষের সমস্যার কথা জানান। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে আসে আর্থিক সহায়তা। সেই অর্থেই অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থী সুমাইয়ার জন্য আমার ফেসবুক পেইজে সহযোগিতার জন্য পোস্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪৩১ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। আরও ৬৬ হাজার টাকা ম্যানেজ হলেই সুমায়ার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব, করা হবে। সরকারিভাবে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। 

এছাড়া সুমাইয়াকে আবারও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়