ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৪ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১১:১২, ৪ অক্টোবর ২০২৩
বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ

আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালের সামনে জনতার ভিড়

বগুড়ায় ডিবি পুলিশ হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) নামে আইনজীবীর এক সহকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ তাকে হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করে নিয়ে যায়।

নিহত হাবিবের স্বজন এবং সহকর্মীরা দাবি, ডিবি পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়নি। মৃত অবস্থাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি পুলিশ। ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পরপরই হাবিব বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

নিহত হাবিব শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া দামার পাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে। তিনি বগুড়া জজ আদালতে সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হকের ভাগ্নে এবং তার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া তিনি বগুড়া জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ বছর আগ শাজাহানপুরের রানীরহাট জোড়া এলাকার ১৩ বছরের বিপুল নামের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন হাবিব। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন শিশুর সৎ মা খুকি বেওয়া। চলতি বছরের গত ৪ আগস্ট দুই দিন ধরে নিখোঁজ বৃদ্ধা খুকি বেওয়ার দুই পা কাটা বস্তাবন্দি লাশ জোড়া তালপুকুর এলাকায় থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই সময় একটি কাটা পা পাওয়া গেলেও গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে আরেকটি পা পাওয়া যায়। পরে তাকে আটক করে শাজাহানপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসে। এরপর তাকে ডিবি পুলিশ সন্ধ্যায় আটক করে। পরে তাকে মনোয়ারা বেওয়ার সামনে নিয়ে গেলে সে বুকে ব্যথা অনুভব করছে বলে জানায়। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

বগুড়া জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সন্দেহমূলক আটক করে নিয়ে যায়। এরপর তার ওপর নির্যাতন করা হয়। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতের মামা বগুড়া জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার আগে কোর্টের সামনে থেকে গাড়িতে করে কয়েকজন ব্যক্তি সাদা পোশাকে আমার ভাগ্নেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে জানতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ডিবি পুলিশ তাকে একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে। পরে আমরা ডিবি অফিসে যাই। ভাগ্নের সাথে দেখা করতে চাইলে আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয় না। এরপর এশার নামাজের পর লোকমুখে জানতে পারি আমার ভাগ্নে মারা গেছে। তার লাশ মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে রয়েছে।

বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আতিকুর রহমান বলেন, ইমার্জেন্সি অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমাকে বুকে ব্যথার কথা জানানো হয়। আমি অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েছিলাম। এরপর তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর রোগী মারা যায়।

নিহত হাবিবের স্বজন এবং সহকর্মীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার বলেন, তাকে কোনো টর্চার করা হয়নি। তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এমন সুযোগও তো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডিবি সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি নির্ণয় করবে কার কতটুকু দায়।

/এনাম আহমেদ/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়