ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও-২: নৌকার প্রার্থী হতে চান একই পরিবারের ৪ নেতা

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ৪ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ২০:০৭, ৪ অক্টোবর ২০২৩
ঠাকুরগাঁও-২: নৌকার প্রার্থী হতে চান একই পরিবারের ৪ নেতা

বাম থেকে এমপি দবিরুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম সুজন, আলী আসলাম জুয়েল ও মোহাম্মদ আলী

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। দীর্ঘ ৩৫ বছর থেকে এই আসনের শাসনভার তারই হাতে। এমপি দবিরুলের আধিপত্যে এ আসনে বিকল্প প্রার্থী সামনে আসেনি। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিতে তার নিজ পরিবারের তিন সদস্য নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা এবং রাণীশংকৈল উপজেলার দুটি ইউনিয়ন (ধর্মগড় ও কাশিপুর) নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা। আগে থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলো দবিরুলের পরিবার কেন্দ্রিক। তবে প্রথমবার একটি পদের জন্য মুখোমুখি অবস্থানে পরিবারের একাধিক সদস্য।

আগামী নির্বাচনেও নিজ প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমপি দবিরুল ইসলাম। এছাড়াও নৌকার প্রার্থী হওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন, ছোটো ভাই মোহাম্মদ আলী ও ভাতিজা আলী আসলাম জুয়েল। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ শুরু করেছেন। নিজেদের প্রভাব দেখানোর জন্য পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছেন। কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপেও ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে সাত বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। বিগত ৩৫ বছরে কখনও তিনি ক্ষমতার বাহিরে থাকেননি। শুরুর দিকে দবিরুল ইসলাম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম, ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

৩৫ বছরের শাসনকালে বেশ কয়েকবার বিতর্কিত হয়েছেন দবিরুল ইসলাম। বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু হিন্দুগোষ্ঠীর জমিদখল করার অভিযোগে বিতর্কিত হয়েছেন। এছাড়াও নিজ পরিবারের অনেক সদস্যকে দলীয় পদে স্থান দিয়ে রাজনীতিকে পরিবারতন্ত্র করা এবং নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা নিয়েও তাকে নিয়ে বিতর্ক আছে।

দবিরুল ইসলামের জনপ্রিয়তার কারণে ১৯৯৬ সালের পর থেকে এই আসন নিয়ে কখনও ভাবতে হয়নি আওয়ামী লীগকে। দল সরকার গঠন করেছে বা বিরোধী দলে থেকেছে, এমপি দবিরুলের আধিপত্য ছিল স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। এ অঞ্চলে কখনও তিনি বিরোধী শক্তিকে শক্ত অবস্থান গড়তে দেননি। তাই এ অঞ্চল এমপি দবিরুল ইসলামের বললেও ভুল হবে না। এর আগের কোনো নির্বাচনে দবিরুল ইসলামের বিকল্প হিসেবে তেমন চর্চাও শোনা যায়নি। তবে হঠাৎ করে নিজ পরিবারের তিন সদস্যই প্রার্থী হবার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এ নির্বচনী এলাকায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে এমপি দবিরুলের বড় ছেলে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে মাঠ গরম রেখেছেন। এ বছর ২০ সেপ্টেম্বর প্রায় ১০ হাজার নারী নিয়ে নারী সমাবেশ করেছেন সুজন। সেই সমাবেশে উপস্থিত সকলকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার শপথপাঠ বেশ আলোচিত হয়। রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে সুজন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমি প্রার্থী হবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার বাবা কিছুটা অসুস্থ। নির্বাচনের আগে তিনি সুস্থ না হলে আমার জন্যে মনোনয়ন চাইবেন। তাই নৌকার মানোনয়ন পেলে আমার জয় শতভাগ নিশ্চিত।’

বেশ জোরোলোভাবে মাঠে নেমেছেন পরিবারের আরেক সদস্য আলী আসলাম জুয়েল। তিনি এমপি দবিরুল ইসলামের ভাতিজা। জুয়েল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকে জুয়েলকে আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমপি দবিরুলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন। নিজেকে এবারের এমপি প্রার্থী জানিয়ে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গত ১ অক্টোবর প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাগমে বিরাট যুব সমাবেশে করেন তিনি। জুয়েল বলেন, ‘এবার ঠাকুরগাঁও ২ আসনে নতুন মুখের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বচনী এলাকায় আমি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। সব মিলিয়ে প্রার্থী হিসেবে সাধারণ মানুষ আমাকে চাচ্ছে। তাই নৌকার মনোনয়ন পেতে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী। তিনি এমপি দবিরুলের ছোটো ভাই। সেইসঙ্গে অপর প্রার্থী জুয়েলের বাবা। তিনিও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বানে প্রার্থী হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমি একজন যোগ্য এমপি প্রার্থী। নৌকার মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে আমি কেন্দ্রে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবো।’

তবে এই পারিবারিক রাজনীতি থেকে এখন মানুষ বেরিয়ে আসতে চায় বলে মন্তব্য একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার। আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই সরাসরি এই পরিবারের রাজনীতি সমালোচনা ও বিরোধিতা করছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু বলেন, ‘বর্তমান এমপির অনেক বয়স হয়েছে, তিনি এখন আর প্রার্থী হিসেবে উপযুক্ত নন। দীর্ঘ সময় থেকে ওই অঞ্চল একটি পরিবার শাসন করে আসছে। এবার তার পরিবার থেকে ৪ জন মনোনয়ন প্রার্থী। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ পরিবারের বাহির থেকে নতুন কাউকে নৌকার মাঝি চাচ্ছে।’

পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মত ছাপিয়ে এখনও বালিয়াডাঙ্গী সহ আশপাশের এলাকায় শক্তিশালী ও জনপ্রিয় এই পরিবার। আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলার বড় অংশই এমপি দবিরুলকে পছন্দ করেন বলে মত স্থানীয় নেতাদের। এই পরিবারের ৪ জন ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে আহাসানুল্লাহ ফিলিপস নৌকার মনোনয়ন প্রার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়