ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৫ ১৪৩১

এ যেন বাদুরের সাম্রাজ্য!

সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৫, ৭ অক্টোবর ২০২৩  
এ যেন বাদুরের সাম্রাজ্য!

কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ছোট-বড় হরেক রকমের গাছ। এসব গাছের মধ্যে বহুবর্ষী একটি রেইনট্রি গাছের ডালে ডালে পাতার ফাঁকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে শত শত বাদুর। দেখলে মনে হবে, এ যেন বাদুড়ের সাম্রাজ্য। অসংখ্য বাদুড় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঁ চিঁ ডাকে মুখরিত করে রাখে গাছতলা। 

যশোরের ঝিকরগাছার পারবাজার গরুরহাট প্রাঙ্গণে কপোতাক্ষ নদ তীরে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। বাদুড়ের বসবাসের কারণে এ এলাকার নামকরণ হয়েছে বাদুরতলা। বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণিটি দেখতে দূর-দূরন্ত থেকে সব বয়সের মানুষ আসে এখানে। স্থানীয়দের দাবি, বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণিগুলো এখনই সংরক্ষণ করা না গেলে হারিয়ে যাবে। আর বাদুরের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। 

উঁচু গাছের মগডালে বাদুরের ঝুলে থাকা একসময় ছিল গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে এখন গ্রামগঞ্জে ঘুরলেও দেখা মেলে না উড়তে জানা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণিটির। বসবাসের জন্য উপযুক্ত গাছপালা না থাকায় এবং খাবারের সংকটের কারণে বাদুর আজ বিলুপ্তপ্রায়। পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে বাদুরের কদর নেই। নানা কল্প-কাহিনীর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রাণি হিসেবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যশোরের ঝিকরগাছা পৌর শহরের গরুর হাট প্রাঙ্গণে একটি গাছে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে এসব বাদুর। নদী তীরবর্তী বহুবর্ষী গাছে বাসা বেঁধেছে প্রায় শত শত বাদুর। রেইনট্রি গাছের শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা দুটো আটকিয়ে নিস্তব্ধে ঝুলছে অসংখ্য বাদুর। অক্লান্ত শ্রমের যেন তারা একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে। দিনের বেলা স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলো চোখে দেখতে না পারায় গাছের ডালে ঝুলে থাকে, আর এ ডাল থেকে সে ডালে ছুটে বেড়ায়। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাদুরগুলো খাবারের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় দূর-দূরন্তে। খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে আসে নীড়ে।

ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন জানান, এখন যে রেইনট্টি গাছে বাদুরগুলোর আবাসস্থল হয়েছে; এর আগে একই জায়গায় বিশাল বড় তেঁতুল গাছ ছিল। সেখানে এসব প্রাণিগুলোর আবাসস্থল ছিল। মূলত গাছপালা আগের মতো না থাকাতে; এই বাদুরগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে। এখন অল্প সংখ্যক বাদুর রয়েছে।’ 

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেবা’ সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, ‘বাদুর বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি। তবে এটা গর্বের বিষয়; সেই বাদুর ঝিকরগাছাতে রয়েছে। আমরা আনন্দিত এই বাদুরতলাতে বাদুরের ডাক শোনা যায়। পূর্ব-পুরুষদের মুখ থেকে শুনে আসছি বাদুর তলার গল্প। আমরা আশা করব, বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর এই বাদুরগুলোকে সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।’ 

স্থানীয় বয়োজ্যৈষ্ঠ বাসিন্দা নজরুর মুন্সী বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদুরগুলো চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে গাছতলা। এ প্রাণির দেখতে দূর-দূরন্ত থেকে সব বয়সের মানুষ ছুটে আসে। 

আব্দুল খালেক নামে এক দর্শক বলেন, ‘গরু হাটে গরু কিনতে এসেছি। এ হাটে আসলে বাদুর দেখতে পাই। আমার জীবনে এত বাদুর একসঙ্গে দেখনি। হুকের মতো একসঙ্গে ঝুলে থাকা বাদুর দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।’ 

ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, শত শত বাদুর ঝুলে রয়েছে। যেন মনে হয়, পাতার চেয়ে বাদুর বেশি। আগে অনেকে বাদুর ধরত, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় এখন আর ধরে না। নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান তিনি। 

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনার বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানায়, ডানা বিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণি বাদুর। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে ১২ প্রজাতির বাদুর রয়েছে।

/বকুল/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়