তিস্তায় আবারো বেড়েছে ভাঙন, হতাশায় নদীপারের মানুষ

লালমনিরহাটে পঞ্চম দফা বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্ট শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে তীরবর্তী বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। 

কয়েকদফা বন্যায় তিস্তার ভাঙনে এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমিসহ কমপক্ষে ৭০টি বসতভিটা। নষ্ট হয়েছে আগাম সবজিসহ আমনের ক্ষেত। নদী ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এ অঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে চরম হতাশায়।

রোববার (৮ অক্টোবর) জেলার হাতিবান্ধায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৬৫ মিটার, যা বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গত বুধবার (৪ অক্টোবর) একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৪০ মিটার। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। 

টানা বর্ষণ ও ভারতের সিকিমের একটি বাঁধ ভেঙে আসা পানিতে তিস্তায় সৃষ্ট স্বল্প মেয়াদী বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও দূর্ভোগ কমেনি। পানিতে ভেসে আসা পলিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের ফসল। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় আবারো লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, বাগডোরা আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, চন্ডিমারীসহ তিস্তা নদীর কমপক্ষে ৬টি পয়েন্টে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এরইমধ্যে এসব এলাকার বসতভিটা, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা বিলীন হতে শুরু হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব মানুষেরা ঠাঁই নিচ্ছেন উচু রাস্তা বা অন্যের জমিতে। ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, নদী ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিবছর নদী ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুরের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, আমার বাড়ি গতকাল রাতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটা ছাড়া কিছু নেই। সেটুকুও হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবো কুল কিনারা খুজে পাচ্ছি না। 

এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দোষারোপ করে বলেন, কর্তারা এসে দেখে যায়। মাঝে মধ্যে কিছু বস্তা ফেলে, তবে তা যথেষ্ট নয়। 

একই এলাকার বাসিন্দা লঙ্কেস্বর রায় বলেন, এবারের বন্যার পানি হঠাৎ নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই শুরু হ'য়েছে ভাঙন। এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদী পারের কৃষকরা হতাশায় ভুগছে।

পার্শ্ববর্তী গ্রামের নদী তীরবর্তী বাসিন্দা জাবেদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, নদী ভাঙনে জমি হারিয়েছেন এবার বসতভিটাও বিলীন হয়ে গেলো। বর্তমানে অন্যের জমিতে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। 

রাজপুরের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নুরুল আমিন বলেন, এবারের কয়েক দফা বন্যায় শুধু রাজপুরের ৬৫-৭০টি বাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙন শুরু হ'য়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা না নিয়ে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তার।

একই রকম মন্তব্য করেন খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা, চন্ডিমারীসহ আদিতমারী উপজেলার নদী ভাঙন এলাকার বাসিন্দারা।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, তিস্তার গর্ভে পলি পড়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে অল্প পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার শুরু হচ্ছে তীব্র ভাঙন। এতে প্রতিবছর ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙন ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনতে দ্রুতই স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তার।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা রাজপুর, বাগডোরা, চন্ডিমারী, মহিষখোচাসহ বেশকিছু পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।