ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

বদ্ধ রুমে গান বাজিয়ে মারধর, ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ শিক্ষার্থী 

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০০, ৮ অক্টোবর ২০২৩  
বদ্ধ রুমে গান বাজিয়ে মারধর, ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ শিক্ষার্থী 

নিখোঁজ শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন মুন্না

সাভারের আশুলিয়ার একটি মাদরাসায় চুরির অভিযোগে আব্দুল মোমিন মুন্না (১২) নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছিল। মাদরাসার একটি বন্ধ কক্ষে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে তাকে মারধর করা হয়। ঘটনার পর গত ১৩ দিন ধরে ওই শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে। এদিকে, এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (৮ অক্টোবর) সকালে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বাবা মো. ওমর ফারুক এতথ্য জানান। 

এর আগে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে কাইচাবাড়ি আহম্মেদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে নিখোঁজ হয় মোমিন মুন্না। ২৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় জিডি করেন শিশুটির মা মনিশা বেগম। 

নিখোঁজ মোমিন মুন্না রংপুরের পিরগাছা থানার বলিহাট গ্রামের মো. ওমর ফারুকের ছেলে। সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কাঁইচাবাড়িতে থেকে মাদারাসায় পড়াখেলা করতো। 

মোমিন মুন্নার বাবা ওমর ফারুক বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আমার ছেলের মাদরাসা থেকে আবু হানিফ নামের এক শিক্ষক এসে জানতে চান আমার ছেলে বাসায় আছে কি না? কিন্তু আমি তো ছেলেকে মাদরাসায় রেখে এসেছি। তার তো মাদরাসায় থাকার কথা। পরে মাদরাসার সেই শিক্ষক বলেন আপনার ছেলে ব্লুটুথ ইয়ারফোন চুরি করেছে এর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর সে মাদরাসা থেকে পালিয়েছে। আমরা মাদরাসায় গিয়ে জানতে পারি সেখানে আমার ছেলে নেই। আমরা তিন চারদিন ধরে আমার ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে থানায়  জিডি করি। 

তিনি আরও বলেন, জিডির পর মাদরাসার সভাপতি আবু বক্কর বাক্কা আমাদের বাসায় আসেন। হুমকি দেন এবং জিডির কপি চান তিনি। কপি দেইনি দেখে তিনি মারতে গিয়েছেন আমাকে। অন্য দিকে পুলিশকে বললে পুলিশ বলে, আপনারা খুঁজতে থাকেন। 

শিশুটির মা রেশমা বেগম বলেন, হজুর আমার ছেলেকে অনেক মারধর করেছে। আমি ছাত্রদের থেকে শুনেছি কয়েকটা লাঠি একসঙ্গে করে শিক্ষক আবু হানিফ কস্টেপ পেচিয়ে একটা রুমে নিয়ে সাউন্ড বক্সে ইসলামিক গান ছেড়ে আমার ছেলেকে মারধর করছে। এরপর থেকে আমার ছেলেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমরা থানায় যাই। থানা থেকে পুলিশও সেই মাদরাযায় যায়। তদন্ত করে। কিন্তু আমার ছেলেকে পায় না। পুলিশ বলে তোমরা খোঁজো ওরাও খুঁজুক৷ আমি আমার ছেলেকে চাই। যারা আমার ছেলেকে মারধর করেছে তাদের বিচার চাই। 

মাদরাসার প্রিন্সিপালকে মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি যেদিন পালিয়ে যায় আমি ছুটিতে ছিলাম। আমি মাদরাসায় এসে শুনেছি এমন ঘটনা। আমাদের শিক্ষক ছেলেটিকে মেরেছে বিষয়টি আমি শুনেছি। সেটারও ব্যবস্থা আমরা নেবো। আগে ছেলেটিকে খুঁজে পাই। আর ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে।

মাদরাসাটির সভাপতি আবু বক্কর বাক্কা বলেন, একটা ইয়ারফোন নিয়ে এই কাণ্ড হয়েছে। পরে শিক্ষকরা তার (শিশুর) বিচার করছে মারছে। এরপর শিশুটি চলে গেছে। আমরা তাকে খুঁজছি। পুলিশও খুঁজছে। 

শিশুটির পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শিশুটির পরিবারের কাছে জিডির কপি চাইতে যাই। 

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকির বলেন, আমি ঘটনার বিস্তারিত জানতে মাদরায় গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া আশেপাশের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ শিশুর তথ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সবাইকে খুঁজতে বলেছি। 

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আরেকটি আলাদা জিডি হয়েছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জিডি কপিটি চেয়েছিল ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে। সেটি না দেওয়ায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে।

সাব্বির/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়